স্বাধীনত্তোর প্রায় অর্ধশত বছর পার হয়ে গেলেও বঞ্চিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মালেক বিশ্বাস মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃত পায়নি। দেশের বিভিন্ন দক্ষ যোদ্ধাদের হাতে অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতের রানাঘাট ক্যাম্প ও চাপড়া ইয়ুথ ক্যাম্প নদীয়ায় অবস্থান ছিল এই যোদ্ধার।
যুদ্ধকালীন সময়ে মার্চের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাক হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন আঃ মালেক বিশ্বাস। মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর অকৃতিম ভালবাসা এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের দিগবিজয়ী ভাষণ তাকে মুক্তিযুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন বলে জানা
যায়।
এছাড়া তৎকালীন ৮ নং নহাটা ইউনিয়ন, মহম্মদপুর, মাগুরা’র মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হাবিবুর রহমান বাঁশি মিয়া, নজির মিয়া, আইয়ুব হোসেন ও বীর প্রতীক গোলাম ইয়াকুব মিয়ার নিকট থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে নহাটা এবং গংগারামপুরে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এবিষয়ে অধিকার বঞ্চিত আঃ মালেক বিশ্বাস রূপান্তর বাংলাকে বলেন, আমার দক্ষতায় সন্তষ্ট হয়ে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানীর (এম.এ.জি) স্যার আমাকে একটি স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র প্রদান করেন।
এছাড়া (১)মাগুরা জেলা ইউনিট কমান্ড। বীর প্রতীক গোলাম ইয়াকুব (২)মহম্মদপুর থানা ইউনিট কমান্ড। আলী রেজা (৩) ইউনিয়ন কমান্ডার। মোঃ রফিকুল ইসলাম (৪) মাননীয় সংসদ সদস্য মাগুরা -২ এ্যাডঃ শ্রী বীরেন শিকদার (৫)বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক প্রত্যায়নপত্র যার মুক্তি সনদ নং ০৯৮৮/৯৮।
অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কার্যালয়। (৬) দেশরক্ষা বিভাগ স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র-আতাউল গণি ওসমানী (৭) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাময়িক সনদ -যার ক্রমিক নং ২৪৫৪১।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের সচিব ও প্রতিমন্ত্রী স্বাক্ষরিত। (৮) ২২শে জুলাই ১৯৯৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আবদুল আহাদ চৌধুরী চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ স্বাক্ষরিত “বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল সনদ” যার ক্রমিক নং ১১৪১৬ এবং উপরোক্ত সমস্ত ডকুমেন্ট তাঁর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে বলে তিনি জানান।
আঃমালেক বিশ্বাস সম্পর্কে একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃরবিউল আউয়াল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ হোসেন রূপান্তর বাংলাকে বলেন তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান নাই এটা খুবই দুঃখ জনক!
কি কারণে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এবিষয়ে জানতে চাইলে ৮নং নহাটা ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল ইসলাম এপ্রতিনিধিকে বলেন যে, আব্দুল মালেক বিশ্বাস আমাদেরকে যুদ্ধ কালীন সময় নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতেন। এরপর আঃমালেক বিশ্বাস সহ ২০-২৫ জনকে ভারতে বিশেষ ট্রেনিং এর জন্য ভারতে পাঠানো হয়। তবে তারা ভারতে ট্রেনিংরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
এসময় আঃমালেক বিশ্বাস আরও বলেন-মুক্তি সংগ্রামী জনাব ছাদেক মিয়ার নেতৃত্বে ১ (এক) মাস ট্রেনিং দেওয়া হয়। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে ভারী এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের নদীয়ায় চাপড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে নেওয়া হয় উল্লেখ্য চাপড়া ইয়ুথ ক্যাম্পটি আসাদ মিয়ার ক্যাম্প নামে পরিচিত ছিল। যার কমান্ডার ছিলেন এস কে ব্যানার্জী।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাব আব্দুল হাই এবং বর্তমান মহম্মদপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কমিটির সভাপতি জনাব রেজাউর রহমান রেজু রূপান্তর বাংলাকে বলেন, আব্দুল মালেক বিশ্বাস(খলিশাখালী) আমার পরিচিত তাছাড়া একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনার একাধিক সনদ রয়েছে সুতরাং তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাক এটা আমরাও চাই। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘোষণা ১০% এর কথা উল্লেখ করে বলেন; কোনভাবেই যেন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা এবারের তালিকায় প্রবেশ করতে না পারে সেদিক ও নজর রাখছি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানীসহ আরও অনেকের স্বাক্ষরিত একাধিক সনদপত্র গুলো সঠিক বলে দাবি করছেন আব্দুল মালেক বিশ্বাস।