হাল সময়ের কঠিন বাস্তবতা ও নির্ভর করা মানুষ গুলোর স্বার্থলুটা এবং চরম অবহেলা মানুষকে র্নিস্তব্ধতা, আনমনা, একাকীত্ব করে তোলে। যেন এটা আরেকটি ভিন্ন জগৎ। মনে হয় যেন পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি একদিকে আর আমি একদিকে।
কিন্তু জীবনের সাথে এমনটি কি এক বারেই হয়? আর এমন অভ্যাস হওয়াটাও কি ঠিক?না, ধীরে ধীরে একজন মানুষ তার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা যে অনুভূতি বা প্রতিভা যেটাই বলিনা কেন, যখন সেটা বাহিরে প্রকাশ করতে চাইলেও বাস্তবিক অর্থে তা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তার মনের চাওয়াটা বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হয় এবং পরিবেশের সাথে নিজেকে সমন্বয় করে সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করতে পারে না।
তখনই শুরু হয় তার ভিতরের গুরুগম্ভীর্যতা। এমন ধরনের মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর পিছোনে আমরা প্রত্যকে কোন না কোন ভাবে কি দায়ী নয় তা বলা দুস্কর। আমি মনে করি অবশ্যই আমরা দায়ী। কারণ, আমরা আজ আমাদের ভিতরকে গড়ে তুলছি ময়লার পাহাড় ও স্বার্থের ঝাড়। মনুষ্যত্বটা আজ আমরা গলা টিপে হত্যা করতে চলেছি।
আমরা কি আসলে মানুষ? না, আমারা বাহির থেকে মানুষরূপে যেটা দেখি সেটা একটি কাঠামোমাত্র কিন্তু আসল মানুষটা হলো ভিতরের আর সেই মানুষটাই যদি বোঝে মনুষ্যত্ব কি? তবে, সেখান থেকে সৃষ্টি হবে সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা,
স্নেহ, মায়া, মমতা। যখনই মানুষ একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নিজের মধ্যে জন্মাতে পারবে, তখন মিলবে মানবের জাগ্রত বিবেক।
আমরা যে পরিচয়ে পরিচিত সেই মানুষ তার ধর্ম, বর্ণ, জাতি,ধনী-গরীব, উচু-নিচু সকল মতভেদ ভুলে শুধু মাত্র মানুষ পরিচয় নিয়ে সমাজে মানুষের সাথে আত্নার বাঁধন তৈরি করতে পারি। তবে, মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশ লাভ করে নিজেকে প্রশান্তি লাভের মাধ্যমে তাকে অগ্রগতি পথে ধাবমান করতে পারবে। মনের সাহস আর শক্তিতে তখন সবকিছু মনে হয় যেন জয় জয়কার।
আর তাই আমাদের উচিৎ ভালোবাসাটা কে বর্তমান প্রচালিত ভালোবাসার মত না করে মনের গহীন থেকে নিজের ভিতরের মানুষটা কে মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া এবং মনুষ্যত্বের মত মহাৎ কাজের মাধ্যমে মানুষ কে ভালো রাখা বা ভালো মানুষ গড়া।
মানুষের চিন্তা-চেতনা, বিবেক-বিবেচনা, কাণ্ড-জ্ঞান আর বিচার-বুদ্ধির ক্ষমতার কারণে অন্যসব প্রাণী থেকে মানুষকে মানুষরূপে আলাদা করা যায়। মানুষ মনুষ্যত্বের অধিকারী। আর মানবতা বা মনুষ্যত্ববোধ না থাকলে মানুষ কখনই মানুষ নয়। তাই মনুষ্যত্বের বিকাশ প্রয়োজন।
লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, উগ্রতা, স্বার্থপরতা, ক্রোধ প্রভৃতি কারণে মানুষের মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায়। মনুষ্যত্ব লোপ পেলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, মানুষ হয়ে যায় অমানুষ। গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, ইভটিজিং, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, ঘুষ, অপহরণ, দুর্নীতি, অরাজকতা, মিথ্যা বলা, কারো ক্ষতি করা, কাউকে বিপদে ফেলা ও অশান্তি সৃষ্টি ইত্যাদি অমানুষের কাজ। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি, আধিপত্য বিস্তার ও অহংকার মনুষ্যত্ব লোপ পাওয়ার অন্যতম কারণ।
মানুষের ভেতর ভালো-মন্দের দ্বন্দ্ব থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। মন্দকে পরিহার করে ভালোকে বেছে নেয়া, ভালো পথ অনুসরণ করা মনুষ্যত্বের কাজ। আদর, স্নেহ, প্রেম, ভালবাসা, দয়া, উদারতা, মায়া, মমতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সততা, ধৈর্য, ত্যাগ, ক্ষমা, সহনশীলতা, সহানুভূতি, সৌজন্য, আদব, শৃঙ্খলা, বিনয়ী, কল্যাণ চিন্তা, ভালো ব্যবহার ইত্যাদি হচ্ছে মনুষ্যত্বের উপাদান।
প্রতিটি মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব লুকিয়ে থাকে। হিংস্র স্বভাবটাকে দাবিয়ে রাখতে পারলে এবং সহিষ্ণুতার সঙ্গে একটু চর্চা করলেই মানুষের ভেতর থেকে মনুষ্যত্ব জেগে ওঠে।
মানুষ শুধু মানুষ হলেই হবে না, মানুষের ভেতর মনুষ্যত্ব থাকতে হবে। কেননা মনুষ্যত্ব মানুষের জীবনকে আলোকিত করে। মনুষ্যত্বহীন মানব জীবন কখনও আলোর মুখ দেখে না। তাই সকল মানুষের উচিত মনুষ্যত্ব অর্জনের সাধনা করা। অনন্
ত সুন্দর ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়ে মানুষের ভেতর মনুষ্যত্ব জেগে ওঠবে, দূর হবে সকল জঞ্জাল এটাই কামনা।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।