ভোলা নামের ভূতুটির খুব খিদে পায় মাঝ রাত্তিরে। ছোট্ট ভূতদের অন্য ভূতেরা আদর করে ডাকে
” ভূতু “। তো পূর্ণিমার চাঁদ উঠলেই খিদে বেড়ে যায় ভোলা ভূতুর। মেঠো ইঁদুরের সসে ডুবিয়ে গরমাগরম চামচিকে ফ্রাই, সাথে মরা মশা-মাছির স্যুপ ——- এ দু’টো তার খুব ফেভারিট ডিশ।
কিন্তু মাঝরাত্তিরে তার এসব খাবারের বায়নায় বেজায় অসুবিধেয় পড়ে যান তার মা পাটকাঠি শাকচুন্নি বেগম। এই এ্যাত্তো রাত্তিরে কোথায় পাওয়া যাবে রান্নার এতো সাজসরঞ্জাম? কিন্তু মনমতো খাবার না পেলে ভোলা ভূতুর নাঁকি সুরে চিঁ চিঁ কান্না কিছুতেই থামানো যায় না যে! ওর যন্ত্রণায় বুনো শেয়ালদের গাওয়া গজল-ঠুমরী একটু মন দিয়ে যে শুনবে তার মা পাটকাঠি, সেই উপায় কি আর আছে!
অগত্যা সব পূর্ণিমায় গোল রূপালী চাঁদের আলোয় আকাশ ভেসে গেলেই, ভোলা ভূতুদের কবরস্থানের শ্যাওড়া গাছটিতে হুলুস্থুল পড়ে যায়। ভোলার ভাই শোলাভূত, সে বেজায় ব্যস্ত নেকাপড়া নিয়ে। ভূত বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে উঠে সে খুব মনোযোগ দিয়ে শিখছে, কিভাবে মানুষগুলোর পিলে চমকে দেয়া দাঁত কেলানি হাসি হাসতে হয়। এত্তো কঠিন পড়া, মনে থাকতেই চায় না শোলার। তবু না পড়লে মা বকবে যে! ভূতুনি মিস ও ক্লাসে ঠ্যাং উপরে তুলে হাতে ভর দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবেন। তাই পূর্ণিমার আলোয় একটু বই খুলে পড়ছিলো সে শ্যাওড়া গাছের নীচু এক ডালে দুলে দুলে।
তবু উঠতেই হলো তাকে পড়া ছেড়ে। কি আর করা! গায়ের চাদর হিসাবে ব্যবহার করা পুরনো কাফনের কাপড়টাকে গাছের আরেকটা ডালে ঝুলিয়ে রেখে সে বেরুলো ঘুমন্ত চামচিকে জোগাড়ে। সোজা কাজ নাকি এতোগুলো চামচিকে জোগাড় করে আনা? রাজ্যের যতো কঠিন কাজের দায়িত্ব মা কেন যে সব তার কাঁধেই চাপান। বোঝে না সে। তবু ছোটো ভাই ভূতের আবদার।
তাই নিতান্ত অনিচ্ছায় কবরস্থানের ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া গাছগুলোর ডাল আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে লাগলো সে। কোথায় যে হতচ্ছাড়া চামচিকেগুলো সব গাছের ডালে পা লটকে ঝুলঝুল খেয়ে ঘুমাচ্ছে? কে জানে!
লেখকঃ সমিত জামান, কলামিস্ট