ভারতীয় পত্রিকা অনুসারে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আব্দুল মাজেদকে ভারত থেকে তুলে আনে বাংলাদেশী গোয়েন্দাসংস্থার সদস্যরা । তিনি গত ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে নিখোঁজ ছিলো। ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ ভারতের কলকাতায় দীর্ঘ দিন ছিলেন আলী আহমেদ নাম পরিচয়ে । তাঁর চেয়ে বয়সে ৩২ বছরের ছোট স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন । সেই স্ত্রীর ঘরে তাঁর ছয় বছর বয়সী এক কন্যাসন্তানও আছে । পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনে ঘাতক মাজেদকে সবাই চিনতেন মাষ্টারমশাই পরিচয়ে ।
আব্দুল মাজেদের ফাঁসি হওয়ার পর কলকাতার ‘বর্তমান পত্রিকা’ তাকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করেছে । ‘ঘাতকের ডেরা’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে সাংবাদিক ভৌমিক রায় লিখেছেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে নিঁখোজ ছিলেন আব্দুল মাজেদ । তার এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশী গোয়েন্দা সংস্থা’কেও সন্দেহের চোখে রাখা হয়েছে ।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সিসিটিভি’র ফুটেজ ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর একটি ওষুধের দোকানে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদ । সেখানে মিনিট আটেক কাটানোর পর ঠিক ১০টা ১২ মিনিটে যখন রিপন স্ট্রিটের দিকে মুখ করে ফের পথ চলতে শুরু করেন, তখন থেকেই তাঁকে অনুসরণ করা শুরু করে ওই দুই ব্যক্তি । পরে তাঁদের সঙ্গে আরও দু’জন যোগ দেন । মোট চারজন সেদিন পিছু নিয়েছিলেন মাজেদের । সিসিটিভি’র ফুটেজে সবার ছবিই ধরা আছে । তদন্তে নেমে পুলিশ ও এসটিএফ-এর অফিসাররা পিছু নেওয়া ওই ষণ্ডামার্কাদের কাবুলিওয়ালা ভেবে প্রথমে ভুল করেছিল। উল্লেখ্য, মাজেদ ছোটখাট সুদের কারবারও চালাতেন ।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ধরে এসে রাস্তা পার হয়ে এজেসি বোস রোডে আসেন মাজেদ । উদ্দেশ্য, বাস ধরা । গন্তব্য পিজি হাসপাতাল । এর পরের ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ওই চারজন মাজেদের সঙ্গে কথা বলছে । তবে ক্যামেরা উন্নত না হওয়ায় কী কথা হয়েছিল, তা শোনার উপায় নেই । ঠিক তখনই মৌলালির দিক থেকে আসা একটি সল্টলেক-সাঁতরাগাছি রুটের বাসে উঠতে দেখা যায় মাজেদকে । যথারীতি সেই বাসে চাপেন ওই চারজনও । এরপর আর কোনও ফুটেজ নেই ।
তদন্তে নেমে পুলিস এজেসি বোস রোডের প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছে । না, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বাস স্টপ থেকে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত কোথাও বাস থেকে নামতে দেখা যায়নি আব্দুল মাজেদকে ।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র জানিয়েছে, মাজেদের মোবাইলের সর্বশেষ টাওয়ার লোকেশন ছিল মালদহ । যা থেকে গোয়েন্দাদের অনুমান, মাজেদকে ঘুরপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাওড়া স্টেশনে । সেখান থেকে ট্রেনে প্রথমে গুয়াহাটি । পরে শিলং হয়ে ডাওকি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ যান তিনি । তবে তিনি স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, নাকি বাধ্য করা হয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহ আছে । মনে করা হচ্ছে, ট্রেন মালদহ স্টেশনের আশপাশে থাকাকালীন তিনি তাঁর মোবাইলটি একবার অন করেছিলেন ।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ওই চারজন কারা? তাঁরা কি বাংলাদেশের কোনও গোয়েন্দা এজেন্সির অফিসার? সত্যিই এনিয়ে তদন্ত হাওয়া দরকার, বলছেন পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দারা । কলকাতা পুলিশের অজান্তে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেল মাজেদকে? কেননা, আইনত কোনও বিদেশি গোয়েন্দা এজেন্সি বিনা অনুমতিতে অন্য দেশে ঢুকে অভিযান চালাতে পারে না ।
বাংলাদেশ সরকারিভাবে ৭ এপ্রিল জানিয়েছে, করোনার ভয়েই মার্চ মাসের শেষদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি। বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজমের গোয়েন্দারা তাঁকে মীরপুর থেকে গ্রেপ্তার করেন । এই যুক্তি অবশ্য ধোপে টিকছে না। কারণ ভারতে প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলে ৩০ জানুয়ারি । তাও আবার দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরলে । কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনি লুকিয়ে ছিলেন কলকাতায় । এখানে করোনা ধরা পড়ে ১৮ মার্চ। ফলে ২২ ফেব্রুয়ারি মাজেদ কলকাতা থেকে বাংলাদেশে যাবেন কেন? আব্দুল মাজেদের নিখোঁজ হওয়া থেকে বাংলাদেশে তাঁকে গ্রেপ্তার—গোটা পর্বই রহস্যে ঘেরা । সেই রহস্যের কি আদৌ কোনওদিন কিনারা হবে?