করোনাভাইরাসের দাপটে মানব সমাজ আজ ক্লান্ত ।আপনজন হারানোর ভয়ে সমাজ অশান্ত,নিজেকে বাঁচাতে চলছে শারিরীক দূরত্ব।সমাজ ব্যাবস্থা সামাজিক রাখতে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।বাঁচতে চাইলে জানতে হবে,জেনে তবে মানতে হবে,তবেই পাবে মানব রক্ষা।:- যা পূর্বে বিজ্ঞানীদের অজনা ছিল, করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসের মারত্বক রোগ সৃষ্টি করে । চীন থেকে পুরো বিশ^সহ বাংলাদেশে মারত্বক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ।
বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা করোনাভাইরাসকে বিশ্ব মহামারি ঘোষনা করেছে । এটি এমন একটি ভাইরাস যা আগে কখনো মানুষের মাঝে ছড়ায়নি । ভাইরাসটি অন্য নাম ২০১৯ – এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরাস । এটি অনেক রকম প্রজাতির মধ্যে একটি । এদের মধ্যে ছয়টি প্রজাতি মানুষের শরীলে আক্রান্ত হতে পারে । তবে নতুন ধরনের ভাইরাসের কারনে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি । ২০১২ সাল থেকে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমনে পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিল । সেটিই ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস ।
নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল যেমন চায়না ভাইরাস, করোনাভাইরাস,২০১৯ এাকভ,নতুন ভাইরাস, রহস্য ভাইরাস ইত্যাদি ।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছরের ফ্রেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ এর সংক্ষিপ্ত রুপ । করোনাভাইরাসের কারনে মানবদেহে যে রোগের সৃষ্টি হয় । তার নতুন নাম কোভিড-১৯ রেসপিরেটরি লক্ষন ছাড়াও জ¦র ,কাশি, শ^াস প্রস্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষন । করোনাভাইরাস ফুসফুসকে আক্রমন করে । সচারাচর শুকনো কাশি ও জ্বরের মাধ্যমে উপসর্গ দেখা দেয় , পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয় । সাধারনত রোগের উপসর্গগুলো প্রকোপ পেতে পাঁচ দিন সময় লাগে । ভাইরাসটি ১৪ দিন পর্যন্ত মানুষের শরীলে বেঁচে থাকতে পারে । তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে ২৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিশ্ব দেশগুলো যদি সামাজিক দূরত্বের কড়াকড়ি খুব তাড়াতাড়ি তুলে নেয়, তাহলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তার ঘটতে পারে ।
সাবান ও গরম পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিন অথবা স্যানিটাইজার জেল ব্যবহার করুন । হাঁচি ও কাঁশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন । টিস্যু না থাকলে জামার হাতা ব্যবহার করুন । হাত না ধুয়ে চোখ,নাক,মুখ স্পর্শ করবেন না । অসুস্থ মানুষ থেকে দুরে থাকতে হবে ।
মানুষ থেকে মানুষের দেহে কীভাবে করোনাভাইরাস ছড়ায় সে বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি বিশেজ্ঞরা ।
গণপরিবহন পরিবহন এড়িয়ে চলা বা সতকর্তার সহিত বিয়টি দুরত্ব দেওয়া । বাস,ট্রেন বা অন্য যে কোন ধরনের পরিবহনের হাতল কিংবা আসনে করোনাভাইরাস থাকতে পারে । সেজন্য যে কোন পরিবহনের চলাফেরার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা এবং সেখান থেকে নেমে ভালভাবে হাত পরিষ্কার করার উপর গুরত্ব দিচ্ছেন বিশেজ্ঞরা। অফিসে একই ডেস্ক এবং কম্পিউটার ব্যবহার করলে ভাইরাস সংক্রমনের ঝুকি থাকে । বিশেজ্ঞরা বলেছেন , হাচি – কাশি থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় যে কোন জায়গায় করোনাভাইরাস অনেক ঘন্টা এমনকি কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে । অফিসের ডেস্কে বসার আগে কম্পিউটার,কিবোর্ড এবং মাউস পরিস্কার করে নিন। যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় ,সেসব জায়গা পরিহার করে চলা বা বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছে বিশেজ্ঞরা । এদের মধ্যে রয়েছে খেলাধুলার স্থান,সিনেমা হল ইত্যাদি ।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যখন যেসব গ্রাহকরা একই কলম ব্যবহার কারনে তখন ছড়াতে পারে । নিজের লেখার জন্য আলাদা কলম ব্যবহার করতে হবে । এছাড়া টাকা উত্তোলনের জন্য যে এটিএম বুথ ব্যবহার করা হয়,সেখান থেকেও সংক্রমন ছড়াতে পারে । ভাইরাস সংক্রমন ক্ষেত্রে আরেকটি জায়গা হতে পারে বাড়ি কিংবা অফিসের লিফট । করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যে লিফট বাটন ব্যবহার করেন , সেই বাটন থেকে অন্যদের ছড়ানোর ঝুকি থাকে । এমনকি ব্যাংক নোটের মাধ্যমে টাকার মাধ্যমে সংক্রামক নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথাও বলেন বিশেজ্ঞরা ।
বাংলাদেশের একদল গবেষক গত বছরের আগষ্ট মাসে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশেী কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এমন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন , যা সাধারনত মূল- মূত্রের মধ্যে থাকে ।
গত মাসে ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে টাকা বা ব্যাংক নোট জীবানুমুক্ত করার একটি উদ্যোগ দেখা যায় চীনে। দেশটিতে করোনাভাইরাস প্রাদুভাব ছড়িয়ে পড়ায় সেখান ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে বাজার থেকে ব্যাংক নোট সরিয়ে নিয়ে তা আবার জীবানুমুক্ত করে বাজারে ছাড়ে দেশটি ।
করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে । বিশেজ্ঞরা বলেছেন সব কিছুর মূলে কথা হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা । হাত না ধুয়ে নিজের মুখমন্ডল স্পর্শ করবেন না । এটি হলে ভাইরাস মংক্রমনের ঝুকি থাকে । সংক্রমন ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালভাবে হাত পরিস্কার করা খুবই গুরত্বপূর্ন বলে উল্লেখ করেছে বিশেজ্ঞরা । কোভিড-১৯ থেকে বাচতে মানমানীয় প্রধানমন্ত্রী সকলকেই ঘরে অবস্থান করার আহ¦ান করেছেন ।
নি¤œ মধ্যবিত্ত সকলের সহযোগিতার জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । দেশে যাতে মহামারী খাদ্য সংকট দেখা না দেয় সেজন্য সলকেই যার যতটুকু সুযোগ আছে সাধ্যমত কৃষি উৎপাদন বাড়ানো তাগিদ দিয়েছেন । সরকার কৃষি প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন । সর্বশেষ কথা হলো আমাদেরকে ধর্মীয় অনুশাষন মেনে জীবন যাপন করতে হবে ।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে এন-৯৫ মাস্কই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও বিজ্ঞানসম্মত । আমরা হাট-বাজার যে সব মাস্ক বিক্রি হতে দেখছি সেগুলো দুষন ধুলা বালি রক্ষা ছাড়া করোনা সংক্রমনে কাজে আসছেনা । করোনার জন্য থেমে গেছে সবই, এ থেকে উত্তোরনের জন্য সকলেই সরকারের নির্দেশমত এক সাথে কাজ করার কোন বিকল্প নেই ।
লেখকঃ এনামুল হক, কলামিস্ট।