হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: বর্তমান বিশ্ব করোনা নামক প্রাণঘাতী ভাইরাসের আক্রমনে দিশেহারা মানুষ। বৈশিক এ মহামারির হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন কৌশলে প্রাণ রক্ষায় যুদ্ধ করছেন বিশ্ববাসী। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনার হাত থেকে রক্ষায় প্রাণপন চেষ্টা করছে। চলছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য লকডাউন।
লক ডাউনের কারনে শ্রমজীবী মানুষরা কর্মহীন হয়ে নিজ গৃহে অবস্থান করছেন।
দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে কোন রকম বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন । সংসার চালাতে অনেকেই হিমসিম খাচ্ছেন।
এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে সরকারি ভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে এবং ভ্রাম্যমাণ খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে টিসিবির পণ্য। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও এগিয়ে আসছে দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে। এমন পরিস্থিতে টিসিবি তেলসহ পণ্য সামগ্রী স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে লোকজনের কাছে বিক্রি করার কথা থাকলেও এসব পণ্য বিক্রি করছেন ইনাতগঞ্জ বাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই ব্যবসায়ী টিসিবির ডিলার না। ডিলারের কাছ থেকে ক্রয় করে এনেই কালো বাজারে বিক্রি করছেন।
গত ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের নাদামপুর ও পাঠান হাটি গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের উদ্যোগে নিম্নবিত্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
কিন্তু বিতরণ কৃত ত্রাণ সামগ্রী টিসিবি পণ্য বলে এলাকায় আলোচনার ঝড় উঠে। বুধবার (১৫ এপ্রিল ) সরজমিনে গেলে সচেতন মহল ও ত্রাণ প্রাপ্তদের সাথে আলাপকালে জানাযায় মঙ্গলবার প্রবাসীদের পক্ষ হতে সৈয়দ আব্বাস আলী, এলাইছ খা, তোফায়েল আহমেদ সহ বেশ কয়েকজন তাদেরকে একটি করে টুকেন দিয়ে ত্রাণ নিতে স্থানীয় বান্দের বাজারে আসতে বলে।
সৈয়দ আব্বাস,মনসুর,জিলুর দোকানে টুকেন জমা দিয়ে নিজ নিজ ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করার জন্য বলা হয়। সে অনুযায়ী দিনমজুর মানুষ সৈয়দ আব্বাস আলীর দোকান কামরান ভেরাইটিজ স্টোর থেকে চাল,ডাল,পিয়াজ এবং বসুন্ধরা টিসিবির তেল নেন। টিসিবি পণ্য খোলা বাজারে কিভাবে যায় প্রশ্ন সচেতন মহলের।
শুধু বান্দের বাজারেই নয়,ইনাতগঞ্জ বাজারের মুদি দোকানগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে টিসিবি তেলসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রী। এ ব্যপারে বান্দের বাজার কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, আব্বাস আলী টিসিবির পণ্য বিক্রি করতেছেন বলে স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ আনলে আমি বিষয়টি সত্যতা পেয়েছি। গরিবের হক নষ্ট করে বেআইনিভাবে টিসিবির পণ্য বিক্রি করায় সাধারণ জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বলে তিন জানান।
কামরান ভেরাইটিজ স্টোরের মালিক সৈয়দ আব্বাস আলী জানান, আমার দোকানে বসুন্ধরা তেল আমি বিক্রি করি। তবে আমি জানতাম না বসুন্ধরা তেল টিসিবির পন্য। কারণ আমি ইনাতগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী লালাপুর গ্রামের হাজী হেলিম উদ্দিনের ছেলে নোমান হোসেনের দোকান থেকে পাইকারিভাবে এনে প্রবাসীদের ত্রান সামগ্রী বিতরণের বিক্রি করি,। তিনি আরো বলেন আমি প্রথমে তীর মার্কা সয়াবিন তেল চাইলে নোমান হোসেন তীর তেল নেই তবে বসুন্ধরা সয়াবিন তেল খুব ভালো বলে আমাকে ২লিটার পরিমাণের ২০০পিস বসুন্ধরা সয়াবিন তেল এবং অন্যান্য মালামাল পাইকারি ক্রয় করি। ( বক্তব্য রেকর্ড আছে)।
এবিষয়ে ইনাতগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নোমান হোসেন জানান সৈয়দ আব্বাস আলী আমার দোকানের কাস্টমার। কিন্ত আমি ৫/৬ দিনের ভিতরে তার কাছে কোন রকম পণ্য বিক্রি করিনি। ৫/৬ দিন আগেওতো সে তেল ক্রয় করে নিয়ে দোকানে রাখতে পারে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি নিরব থাকেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ইনাতগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের বাজারগুলোতে টিসিবি তেল ও পণ্য সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ইনাতগঞ্জের টিসিবি ডিলার হলেন দীঘলবাক ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের জামাল মিয়া। এলাকাবাসী জানান ডিলার জামাল মিয়া টিসিবি পণ্য কোথায় কিভাবে বিক্রি করেন এলাকাবাসী কেউ জানেনা। তাছাড়া ডিলার জামালের সাথে ইনাতগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নোমান হোসেনের রয়েছে সখ্যতা। এই সখ্যতার কারনেই নোমান টিসিবি সব পণ্য ক্রয় করে কালো বাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টিসিবি ইনাতগঞ্জ ডিলার জামাল মিয়া জানান,এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। আমি বারবার পণ্য চাইলেও শেরপুর আঞ্চলিক অফিস থেকে আমাদকে পণ্য দেয়া হচ্ছেনা।
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের উর্ধ্বতন উপকার্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমাইল মজুমদার জানান ইনাতগঞ্জে আমাদের ডিলার জামাল মিয়া। নোমান নামে আমাদের কোন ডিলার নাই। এ বিষয়ে খোঁজ নিতেছি। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান,ডিলার ছাড়া টিসিবি পণ্য অন্য কেউ বিক্রয় করার সুযোগ নাই। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।