করোনা দানবের দাপটে এবার অন্যরকম নববর্ষ পালন করল বাংলা। জুমার নামাজে ১০ জনের অধিক নেই, নেই কোনও জনসমাগম। হয়নি হালখাতা বা পুজোর দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী-দোকানদারদের দীর্ঘ লাইন। হয়েছে শুধু সকলের জন্য মঙ্গলকামনা, করোনামুক্তির প্রার্থনা। নববর্ষের পরদিন সারা বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত হলো।
মোকাবিলায় বিশ্বের বহু শক্তিশালী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সাফল্যের কথা সমাদৃত। বেশ কিছু দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি। তবে সংক্রমণের হার কম।কারণ সঠিক সময়ে অঘোষিত লকডাউন হওয়া। করোনা নামক অদৃশ্য শত্রুকে পরাস্ত করে বিজয়ী হতে গেলে এখন মানুষের কী কী করণীয়, তা প্রতিনিয়ত বাতলে দেয়া। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর গাইডলাইনও স্বাস্থ্য বিধি ঘোষণ। একথা ঠিক, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জিততে হলে সরকারের দেওয়া নিয়মাবলি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে আমাদের। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সেটা নিয়েই গরিব পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে হবে, বাড়াতে হবে সাহায্যের হাত। আর যাঁরা করোনা মোকাবিলায় সামনের সারিতে থেকে লড়াই করছেন সেই চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশসহ সকল স্তরের কর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে, সম্মান করতে হবে তাঁদের। আশার কথা, করোনা আক্রান্ত বহু মানুষ কিন্তু এখন সুস্থ হচ্ছেন, বাড়িও ফিরছেন। ভয়কে জয় করেছেন তাঁরা। তাঁদের লড়াইয়ের কাছে হেরে গিয়েছে করোনা। আর যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এমন আশার আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাঁদেরকে স্যালুট জানাতেই হয়।
করোনা মোকাবিলায় স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতোই গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হল ব্যাপক হারে টেস্ট। প্রশ্ন উঠছে, এক্ষেত্রে কি আমরা কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়ছি? আর গৃহবন্দি উপার্জনহীন মানুষের হাঁড়ির হালের কথা মাথায় রেখে সরকার নানা প্রকার কর্মসূচি হাতে নিলেও ঠিক কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা ঘোষণা করাটাও কি প্রত্যাশিত ছিল না? তবে দেশবাসীর জন্য সরকার কী কী করছে তা জাতির উদ্দেশে ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেছেন।
বিশ্বজুড়ে সঙ্কটের দিনে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। বিপদের দিনে নেতিবাচক মানসিকতা ছেড়ে ইতিবাচক বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব আরোপ বিশেষ জরুরি। পাশাপাশি দরকার আত্মনিয়ন্ত্রণের মানসিকতা। সেটা সম্ভব হলে জীবন যুদ্ধে আমরা জয়ী হবই। পরাস্ত হবে অদৃশ্য শত্রু করোনা।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।