মহান স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর পর নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের ১০জন বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্টীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন। জীবনের শেষ মহুর্তে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে একদিকে যেমন খুশিতে ভরে উঠেছেন তারা, অন্য দিকে একই খুশিতে এবং সম্মানে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে সংর্বধনা দেবে রাণীনগর উপজেলা প্রসাশন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ড এবং স্থানীয় সাংসদ ইসরাফিল আলম।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর তীরে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক হানদার বাহিনীর স্থানীয় দোসর রাজাকার আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রকাশ্য দিবালোকে ওই দিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বীভৎস অপকর্ম চালায়।
এই সময় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নীসংযোগ, লুটপাটসহ জঘন্যতম ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের কিশোর, যুবক, মাঝ বয়সী, ও বিভিন্ন বয়সী নারীদেরকে ধরে আতাইকুলা গ্রামের যোগেন্দ্রনাথ পালের বাড়ির বারান্দায় জড়ো করে ব্রাশফায়ার করে গোবিন্দ চরণ পাল, সুরেশ্বর পাল, বিক্ষয় সূত্রধর, নিবারন পালসহ ৫২ জন মুক্তিকামীকে নির্বিচারে হত্যা করে।
এ সময় পাক হানদার বাহীনি গণহত্যা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনের মতো ধ্বংসলীলা থেকে বিশেষ করে নারীরা স্বামী সন্তানদেরকে প্রাণে বাঁচানোর শেষ আকুতি করেও পাক-জান্তাদের মন গলাতে পারেনি। উল্টো হায়েনারা সুযোগ বুঝে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। সে দিন ৫২ শহীদের তাজা রক্তে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর পানি লাল হয়ে যায়। নির্যাতিত নারী ও স্বজনদের হৃদয় বিদারক আর্তনাত ও কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। দেশ ও মাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আতাইকুলা পাল পাড়া গ্রামের নারীরা বীরোত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও নানান কারণে রাষ্টীয় সম্মান মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি তাদের ভাগ্যে জোটেনি।
অবশেষে নানা চরাই-উতরায় পার হয়ে গত ২৯ জুলাই তারিখে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের বাণী রানী পাল, ক্ষান্ত রাণী, রেনু বালা, সুসমা বালা,মায়া সূত্রধর, রাশমুনিপাল, কালিদাসি পাল, সন্ধ্যা রাণী পাল, গীতা রাণী পাল, ও সুষমা পাল এই ১০ বীরাঙ্গনা মহিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন।
এর মধ্যে বাণী রানী পাল, ক্ষান্ত রাণী, রেনু বালা, সুসমা বালা মারা গেছে। একাত্তরের সেই দুর্বিসহ যন্ত্রণা, সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি অনেকটা দুঃখ-দুর্দশার অভাব-অনটন, আর অসুস্থতার মধ্যেই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম।
শহীদ পরিবারের সদস্য গৌতুম পাল জানান,আমাদের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের ১০ বীরাঙ্গনা মহিলা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যরা অনেক খুশি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমাইল হোসেন জানান, গত ২৯ জুলাই ১০ বীরাঙ্গনাকে মহিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি ও বধ্যভূমি সংরক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে। তাদেরকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে রাণীনগর উপজেলা প্রসাশন ও রাণীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ড এবং স্থানীয় সাংসদ ইসরাফিল আলম সংর্বোধনা প্রদান করবেন। এ ছাড়া তাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের এই আর্থিক সুযোগ-সুবিধা হাতে তুলে দেওয়া হবে।