প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আট জেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা
এবারের ঈদের নামাজের জামাত না হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আট জেলার প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী সেখানকার পেশ ইমাম মওলানা মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদের কথা শোনার ইচ্ছা পোষণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানকার শোলাকিয়ায় ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত হয়। এবার তো আমরা জামাত করতে পারব না। এবার ঈদের নামাজও তো আমরা করতে পারব না। সে জন্য উনার কাছ থেকে একটু শুনি।’
এক নির্দেশনায় দেশের সব মসজিদে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ছয়জন এবং জুমার নামাজে ১১ জন উপস্থিত থাকতে বলেছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী ঘরে বসে নামাজ পড়তে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনার কথা উলেস্নখ করে বলেন, ‘আমরা নামাজ পড়ি কে কখন সংক্রমণ হবে, এর কোনো ঠিক নেই। সে জন্য আমরা বলেছি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে নির্দেশনা গেছে ঘরে বসে নামাজ পড়বেন। আলস্নাহ নিশ্চয়ই ডাক শুনবেন। সবার কাছে আহ্বান জানাব, প্রত্যেকে ঘরে বসে নামাজ পড়েন, দোয়া
করেন সবাই, যেন এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষ বাঁচতে পারে। এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।’
এদিকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেয়ে কিশোরগঞ্জ পুরনো কালেক্টরেট মসজিদের পেশ ইমাম মওলানা মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্ব নেতা আখ্যায়িত করে বলেন, ‘ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা এবং মানুষের উন্নয়নের জন্য রাতদিন চিন্তা করতেন। সে রকম আপনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। রাতদিন আপনার চিন্তা হলো কীভাবে বাংলার মানুষকে সুখী বানানো যায়। শান্তিময় বাংলা বানানো যায়।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি যে চিন্তা ও গবেষণা করেন, সেটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। অন্যান্য দেশে রাষ্ট্রনায়করা যেখানে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, সেখানে বাংলাদেশ থেকে আপনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছেন। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন ও রাহাজানি অনেকটা কমে গেছে। বাংলাদেশকে আপনি সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নয়নের রোল মডেলে নিয়ে গেছেন। আপনি সুস্থ থাকলে বাংলাদেশ সুস্থ থাকবে।’
আগামী বৃহস্পতিবার রোজার চাঁদ ওঠার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রমজানের চাঁদ ওঠার পর আপনার যে নির্দেশনা থাকবে, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’ মানুষ সচেতন হলে রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় মানুষ নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ আরেকটু সচেতন হয়ে নিজেদের সুরক্ষিত রাখলে কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে যেখানে হাজার হাজার লোক প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আমি মনে করি, আমাদের জনগণ যদি আরেকটু সচেতন থাকেন, আরেকটু নিজেদের সুরক্ষিত রাখেন, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। আমি আশা করি, সবাই করবেন।’
নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃতু্যতে দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউকে, ইউএসএ, ইউরোপিয়ান দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশে যে পরিমাণ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং মৃতু্যবরণ করেছে- এটা ভয়াবহ। একমাত্র ইউএসএতেই আমাদের বাঙালি প্রায় ১৫০ জনের মতো মৃতু্যবরণ করেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এ রকম একটা উন্নত দেশে থেকে এভাবে আমাদের বাঙলিরা মারা যাবে।
‘ইউএসএতে যেমন মারা গেছে ইউকেতেও আমাদের এমনকি বাঙালি ডাক্তারসহ অনেকেই সেখানে মৃতু্যবরণ করেছে। আর এভাবে অন্যান্য দেশেও আমরা যদি দেখি, বাঙলি অনেকেই মারা যাচ্ছে। সে তুলনায় আমি যদি বাংলাদেশের কথা বলি, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮৮৫ জনের পরীক্ষা হয়েছে। দুই হাজার ৪৫৬ জনের ভেতর এই রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে আর ৯১ জনের মতো এ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে মৃতু্যবরণ করেছে। এটাও দুঃখজনক। কেউ মারা যাক, এটা আমরা চাই না।’
নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে। আমরা যদিও চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবুও আমরা দেখি, আসলে আমাদের দেশের অনেকেই এটা ভালোভাবে মানতে চান না, যার ফলে সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছেন।
তবে খুব দোষ দেয়ারও কিছু নেই, কারণ এমন একটা ভাইরাস যেটার কোনো লক্ষণও বোঝা যায় না, দেখাও যায় না। শুধু আক্রান্ত হলে পরীক্ষা করলে তখন বোঝা যায়, অথবা যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন বোঝা যায়।’
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, এপ্রিল মাসটা আমাদের জন্য একটু কষ্টের মাস হবে। কারণ, এপ্রিল মাসে একটা প্রাদুর্ভাব ছড়াতে পারে, কারণ এর একটা ট্রেন্ড আছে। আমরা অন্যান্য দেশের অবস্থাটা যদি দেখি, তাহলে এটাই দেখা যায় একবার যদি শুরু হয় তখন এটা সংক্রমিত হতে থাকে। সে ক্ষেত্রে বহু আগেই সতর্ক করেছি, এপ্রিল মাসে সবাইকে একটু আরও সাবধানে থাকা দরকার।’
নতুন ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। ?ভিডিও কনফারেন্সের গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।