ভবঘুরে,ভিক্ষুক, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনদের খাবার দেন তারা। নারী পুলিশ সদস্যরা রান্না করে খাবার তুলে দিচ্ছেন নিরন্ন মানুষের মুখে। গোটা শহর তালাবন্দি। রোজগার নেই। কিন্তু কী করবেন নিম্ন আয়ের মানুষ কিংবা ফুটপাতের বাসিন্দারা? ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ১০১ সদস্য তাই তৈরি করলেন এমন মানুষের লম্বা তালিকা।
শুধু ভবঘুরে বা ভিক্ষুক নন, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনও রয়েছেন এ তালিকায়। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের তেজগাঁও কার্যালয় থেকে সরাসরি অথবা খাবারের প্যাকেট বানিয়ে তাদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। বছরের বেশিরভাগ সময় সহিংসতার শিকার নারী-শিশুর আইনি-মানসিক-স্বাস্থ্যগত সহায়তা, ভিকটিম উদ্ধার, নারী ও শিশু সম্পর্কিত অপরাধের তদন্ত সামলাতে হয় এই নারী পুলিশদের। কিন্তু করোনাজনিত পরিস্থিতিতে তারা রান্না করে খাবার তুলে দিচ্ছেন নিরন্ন মানুষের মুখে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপপুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন পিপিএম ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৫০ পরিবারকে দুই দিনের খাদ্য সহায়তা দিয়ে শুরু করেন অসহায় মানুষের পাশে থাকার যাত্রা। পরে তার সঙ্গে যুক্ত হন ডিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। তেজগাঁও থানার তালিকাভুক্ত ৩ শতাধিক অসহায় কর্মহীন পরিবারকে নিজেদের তৈরি করা খাবার বিতরণ করেন তারা।
মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরে আনন্দিত সহকারী পুলিশ কমিশনার জয়ীতা দাস বললেন, এ যে কী আনন্দ! পুরো পুলিশজীবনে কখনও এত আনন্দ পাইনি। প্রতিদিন দেখছি, মানুষ ত্রাণের আশায় রাস্তায় বসে আছেন। বাড়ি ফিরে যখন সবার সঙ্গে খেতে বসতাম, মন খারাপ হয়ে যেত। চোখের সামনে এসব দেখে আর স্থির থাকতে পারিনি, তাই আমরা দেরি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শুধু মানুষের হাতে রান্না করা খাবার তুলে দেওয়া নয়, যারা কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারেন না, তাদের ঘরে ঘরেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো হচ্ছে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উদ্যোগে। এই ডিভিশনের কোনো সদস্যই এখন নিজেদের রেশন ঘরে নিচ্ছেন না। রেশনের সঙ্গে বেতনের কিছু টাকা দিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করেন এ ডিভিশনের ১০১ নারী পুলিশ।
যারা হাত পেতে ত্রাণ নিতে পারছেন না তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসছেন তারা। ঢাকার যে কোনো প্রান্তের নিম্ন আয়ের কর্মহীন অসহায় মানুষের জন্য এই সহায়তা উন্মুক্ত বলে জানান উপপুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন।।তিনি বলেন, সামাজিক প্রেক্ষাপটে যারা হাত পাততে পারছেন না, তারা এসএমএস করলেই আমাদের টিম বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসছে। পরিচয় গোপন রেখে যে কোনো অসহায় মানুষ এই সহায়তা নিতে পারেন।
তিনি বলেন, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আমরা মানসিকভাবে তৈরি। শহরবাসীকে অনুরোধ করব, তারা যাতে করোনাযুদ্ধে জয়ী হতে আমাদের সাহায্য করেন।