মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ২৫ এপ্রিল ১৯৭১ঃ আজ ঐতিহাসিক উল্লাপাড়ার গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে আজকের এ দিনে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার (বর্তমান সলঙ্গা থানা) হাটিকুমরুল ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে বর্বরিচত গণহত্যা চালায় পাক হানাদার বাহিনী।
সিরাজগঞ্জ: ২৫ এপ্রিল, ঐতিহাসিক উল্লাপাড়ার গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে আজকের এ দিনে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার (বর্তমান সলঙ্গা থানা) হাটিকুমরুল ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে বর্বরিচত গণহত্যা চালায় পাক হানাদার বাহিনী।
এ হত্যাযজ্ঞে চড়িয়া মধ্যপাড়া, পাটধারী, কালিবাড়ী, শিকার মগড়াপাড়া, চড়িয়া শিকার দক্ষিণপাড়া, গোলকপুর ও কাচিয়া গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
এদের মধ্যে ৩৫ জনকে চড়িয়া মধ্যপাড়া পুকুরপাড় ও পাটধারী অন্ধ পুকুরপাড়ে গণকবর দেওয়া হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল ভোর রাতে পাক-বাহিনীর একটি দল রংপুরের সৈয়দপুর থেকে পাবনার কাশিনাথপুর যাওয়ার পথে বগুড়া-নগরবাড়ি সড়কের হাটিকুমরুল এলাকায় ব্যারিকেড পেয়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
এ সময় তারা চড়িয়া শিকা গ্রামের দক্ষিণ-পূর্বপাশে কাশিনাথপুর নামের অপর একটি গ্রামের সন্ধান পায়। এটাকেই পাবনার কাশিনাথপুর মনে করে পাক-বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি খুঁজতে থাকে।
রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় তারা চড়িয়া মধ্যপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ঘাটির সন্ধান পায়। এ ঘাটি তছনছ করে দিতে শুরু হয় পাক বাহিনীর নির্মম গণহত্যা। এ সময় তারা ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘুমন্ত নিরীহ গ্রামবাসীর উপর ব্রাশ ফায়ার করে। আগুনে পুড়িয়ে দেয় শত শত বাড়িঘর। বর্বরদের অত্যাচার থেকে নারী, বৃদ্ধ এমনকি শিশুরাও রেহাই পায়নি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর তথ্য মতে, হিলিতে পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিবাহিনী সিলেট পাকবাহিনীর একটি দলকে শেওলা ঘাট এলাকায় আক্রমণ চালায়। এতে ৮ জন শত্রুসেনা নিহত হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা শেওলাঘাট ফেরী ধ্বংস করে পাকসেনাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করে।
মুক্তিবাহিনীর মীরসরাই অবস্থানের ওপর পাকবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়ান ভারি অস্ত্র-শস্ত্রসহ আক্রমণ চালায়। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধে শতাধিক শত্রুসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীরও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। রাতে মুক্তিযোদ্ধারা মীরসরাই ত্যাগ করে মাস্তান নগরে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে। মধ্যরাতে পাকবাহিনী ট্যাঙ্ক নিয়ে মাস্তান নগর আক্রমণ করে। ভোর রাতে মুক্তিবাহিনী মীরসরাই অবস্থান ত্যাগ করে। হিংগুলিতে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে।
ন্যাশনাল আওযামী পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ মুক্তাঞ্চল থেকে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বিবৃতিতে বাংলাদেশের একমাত্র বৈধ সাংবিধানিক সরকারের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিশ্বের মুক্তি ও গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
গর্ভনর ও সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খান আওয়ামী লীগ নেতা তাজুদ্দীন আহমদ, এস.নজরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, তোফায়েল আহমদ ও দি পিপল-এর সম্পাদক আবিদুর রহমানকে আগামী ২৬ এপ্রিল সকাল ৮ টায় ঢাকার এক নম্বর সামরিক আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।
নেজামে ইসলাম পার্টির আলহাজ্ব সৈয়দ মোস্তফা আল মাদানী, হাজী আকিল সাহাব, আ্যাডভোকেট সৈয়দ আনিসুর রহমান, মওলানা আজিজুল হক ও হাফেজ আহমদ করিম ঢাকায় এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ভারতের সহযোগিতায় সশস্ত্র হানাদারদের (মুক্তিযোদ্ধা) অনুপ্রবেশ পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর পরিষ্কার হামলা স্বরূপ।
ঢাকায় খাজা খয়েরউদ্দিনের সভাপতিত্বে শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শান্তি কমিটির নেতারা দেশের সব জায়গায় শান্তি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ ব্যাপারে যোগাযোগের জন্য গোলাম আজম, মাহমুদ আলী, এ.জে. খদ্দর, আবুল কাশেমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রতিবেদন।
সম্পাদনাঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।