বর্তমানে করোনা (কভিড-১৯) ভাইরাসে মারাত্বকভাবে বিপর্যস্ত বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৩৩ কোটির কাছাকাছি। অথচ সুবিশাল এই কথিত সম্পদশালী দেশটির মাথাপিছু আয় ৬৫ হাজার ডলার দেখানো হলেও জনপ্রতি ঋণের পরিমাণ ২ লক্ষ ২২ হাজার ডলার। যা কিনা চার সদস্য বিশিষ্ট একটি মার্কিন পরিবারে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ডলার। আসলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশী দেশগুলোর কাছ থেকে নেওয়া মোট বৈদেশিক ঋনের স্থিতির পরিমাণ ছিল ৭.০৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
আর এই বিশাল ঋনের মধ্যে একক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ ১.২৭ ট্রিলিয়ন ডলার ঋন প্রদান করেছে জাপান এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋন প্রদানকারী দেশ কিন্তু চীন। ঠিক একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদত্ত চীনের ঋনের স্থিতির পরিমাণ ১.০৯ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌছে গেছে। আবার দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আর্থিক খাত থেকে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের ঋন গ্রহনের প্রবনতা ও হার আশাঙ্খাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চার দশকের মধ্যে তা সর্বোচ্চ ২৪.০০ ট্রিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। আর এই বিপুল পরিমাণ ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ ঋনগ্রস্থ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে অতি মাত্রায় যুদ্ধ প্রিয়তা এবং সারা বিশ্বব্যাপী শান্তির নামে আগ্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতি বছর গড়ে ৭০০ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ নির্বিচারে ব্যয় করে যাচ্ছে দেশটি।
তাছাড়া সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৮০০ এর কাছাকাছি সামরিক ঘাঁটি এবং দীর্ঘ মেয়াদী বেশ কিছু যুদ্ধ পরিচালনায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের দায় বহন করতে হচ্ছে মার্কিন জনগণকে। আর কৌশলগত কারণে রাশিয়া ও চিনকে প্রতিহত করতে এসব সামরিক ঘাঁটির ৭০% পর্যন্ত আদৌ কোন দরকার আছে কিনা তার কোন যৌক্তিক জবাব মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন দিতে পারবে বলে মনে হয় না। আর এহেন চরম মাত্রায় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বা ঘাটতি নিরিসনে মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত কৌশলে সারা বিশ্বে যুদ্ধের আবহ তৈরি করে তাঁদের অতি লাভ জনক অস্ত্রের ব্যবসা চালিয়ে যেতে ব্যস্ত। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা ও আমীর শাসিত দেশগুলোর কাছে নির্বিচারে চাঁদাবাজির পাশাপাশি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। যদিও এই শত বিলিয়ন ডলারের তেল ও অস্ত্র বানিজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই পাহাড় পরিমাণ ৭.০৬ ট্রিলিয়ন বৈদেশিক ঋনের বোঝা থেকে আগামী এক দশকেও মুক্ত করতে পারবে বলে মনে হয় না।
তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি এর আকার ২১.৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার দেখনো হলেও মার্কিনীদের বৈদেশিক এবং অভ্যন্তরীন ঋনের বোঝা বিবেচনা করলে এ মুহুর্তে বিশ্বে সর্বোচ্চ সম্পদশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে রেড জায়ান্ট চায়না। মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের অসংখ্য বানিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও চীন-মার্কিন বানিজ্য যুদ্ধে চীনের রপ্তানি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনের জিডিপি ১৪.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার, রপ্তানি আয় ২.৪৪৯ ট্রিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে চীন সারা বিশ্বের প্রায় ত্রিশটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শতাধিক বৈদেশিক মেগা প্রজেক্টে আনুমানিক ৫.০০ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ঋন কিংবা সরাসরি বিনিয়োগ করে এক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তবে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করলেও দেশটি কার্যত নিজেকে চীনের ধারে কাছেও নিয়ে যেতে পারেছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া এ মুহুর্তে ভারতের বৈদেশিক ঋনের পরিমাণ ৫৯০.০০ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি আয় ৩৩৪.০০ বিলিয়ন ডলার। আর সে হিসেবে এখন দক্ষিণ এশিয়া সর্বোচ্চ ঋনগ্রস্থ দেশ হচ্ছে ভারত এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। আর বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋনের পরিমান ২৮.০০ থেকে ৩০.০০ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও উন্নয়নের বিবেচনায় সামগ্রিক ঋনের বোঝা সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে বলেই প্রতিয়মান হয়।
সিরাজুর রহমান