মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য নতুন করে আরও দুই হাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে।
এরইমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই চিকিৎসক ও নার্সদের করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রত্যেক জেলায় আইসিইউর ব্যবস্থা হবে।’
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এ তথ্য জানান। তিনি রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মত বিনিময়ের অংশ হিসেবে বগুড়ার সঙ্গে কথা বলেন।
নার্স নিয়োগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনার চিকিৎসা করতে আমরা প্রায় ২ হাজার ডাক্তার নতুন নিয়োগ দেবো। ইতোমধ্যে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে যারা রয়ে গেছেন (উত্তীর্ণ কিন্তু সুপারিশপ্রাপ্ত নয়) তাদের থেকে আমরা নিচ্ছি। ছয় হাজার নার্সও আমরা নিয়োগ দেবো। প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমি নিজেই মিটিং করে এটা সব ঠিকঠাক করে দিয়েছি। এদেরকে করোনার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিদেশ থেকে লোক এনেও আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাবো। প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা চিকিৎসা সেবা দেবে। পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলাতে এটা করা হবে। যাতে কোনও জায়গায় মানুষের চিকিৎসার অসুবিধা না হয়।’
স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসেবার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। আমরা প্রত্যেক জেলাতেই কিন্তু যেট ভালো হাসপাতাল, সেখানে আইসিইউ’র ব্যবস্থা করবো। এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সব জেলাতেই এটা করে দেবো।’
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) বৈশ্বিক ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪০০ বাঙালি মারা গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে, শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে করোনা বিরাট একটা সমস্যা। সারা বিশ্বই স্থবির। সবাই ঘরবন্দি।
তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। উন্নত-অনুন্নত দেশ সব দেশেরই একই অবস্থা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা শুরু থেকেই নির্দেশনা দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষ ঘরে থাকার চেষ্টা করেছে। এরপরও জীবন-জীবিকার জন্য বাইরে যেতে হয়।
তিনি বলেন, আমরা ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ওএমএসের ৩০ টাকার চাল ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এজন্য ৫০ লাখ কার্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা আমাদের জন্য বিরাট একটা ধাক্কা। যেসব দেশে রপ্তানি করতাম, সেসব দেশের অর্থনীতি স্থবির।
তিনি বলেন, এখন মানুষের নিরাপত্তাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পরীক্ষা করছে। যা হচ্ছে তা বুলেটিন আকারে প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উপস্থাপন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৪১৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৪৫ জন। বিশ্বে আরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ২ লাখ লোক মারা গেছেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ৪০০ জন বাঙালি মারা গেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা অস্বাভাবিক অবস্থা। আমরা এ রকম আর কখনো দেখেনি। বলা হয়ে থাকে শত বছরে একবার এ রকম অবস্থার সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এসব জেলার প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় শুরু হয়। জেলাগুলো হচ্ছে- বগুড়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জ।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনগুলো এই ভিডিও কনফারেন্স সরাসরি সম্প্রচার করে।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চার দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৮টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে চলার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সংকট উত্তরণে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজেরও ঘোষণা দেন।
সূত্রঃএলবিডি