ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়ায় অবস্থিত পাবনা সুগার মিলের আখচাষিরা করোনাভাইরাসের এই দুর্দিনেও তাদের আখ বিক্রির পাওনা টাকা পাচ্ছেন না। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অর্থ সংকটে পড়েছেন আখচাষিরা। এই মিলে আখ সরবরাহকারী চাষিরা ২৫ কোটি টাকা পাবেন, যা পরিশোধে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছেন।
আখচাষি কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বাদশা বলেন, সারাদেশের কৃষকরা মিলগুলোর কাছে প্রায় ১৭৮ কোটি টাকা পাওনা আছে। আর পাবনা সুগার মিলের কাছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা পাবেন কৃষকরা। আখ চাষে বীজ, সার, সেচ, পরিচর্যা ইত্যাদি করতে গিয়ে টাকা বাড়ি পড়ে থাকে, যা মিলের টাকা পেলে পরিশোধ করেন চাষিরা। কিন্তু গত ৬-৭ মাসেও বকেয়া টাকা মিল কর্তৃপক্ষ না দেয়ায় এখন নানান সমস্যায় জর্জরিত আখচাষিরা।
সফল কৃষক মুরাদ মালিথা জানান, আখচাষিরা মিল চালু রাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ তাদের পাওনা টাকা এভাবে আটকে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তারা আখ চাষে নিরুৎসাহিত হবেন।
আখচাষি রকিবুল ও সালাম জানান, বর্তমানে করোনা সংকটে বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ। এরপর কোনো কাজ নেই। ফলে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কারও কাছে সাহায্য চাওয়ার অভ্যাস নেই।
পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন জানান, উৎপাদিত চিনি বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রায় ৪০ কোটি টাকার চিনি গুদামে পড়ে আছে। চলতি মাড়াই মৌসুম শেষ হয়েছে গত ৭ মার্চ।
পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন জানান, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন, ওভারটাইম ইত্যাদি মিলিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনার পরিমাণ ৬ কোটি টাকা। বর্তমানে করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে পাওনা টাকা না পেলে শ্রমিকদের পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। শুধু শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া আছে তাই নয়, মিলে আখ সরবরাহকারী চাষিরাও বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের আখের মূল্যও পরিশোধ করা হয়নি। আখচাষিদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, পাবনা সুগার মিলে ৭০০ শ্রমিক রয়েছেন। প্রতি মাসে তাদের বেতন ভাতা বাবদ এক কোটি ২০ লাখ টাকার মত খরচ হয়। মিলে গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত অবিক্রিত চিনি গুদামে পড়ে আছে প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন। যার আনুমানিক মূল্য ৪০ কোটি টাকা। শুরু থেকেই পাবনা সুগার মিল লোকসান গুনে আসছে।