সাম্প্রতিক শিরোনাম

কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলি

আমার ছোটভাই যখন রাজশাহীতে নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হল আর বাড়ি ছেড়ে হলের খাতায় নাম লেখাল তখন হঠাৎ একটা অজানা দুঃখ ভর করেছিল মনে।এই বুঝি আর কখনও আমাদের বাড়িতে একসাথে টানা অনেকদিন থাকা হবেনা।তার কয়মাস পর আমিও হলের বাসিন্দা হলাম।তখন তো আরও নিশ্চিত হলাম এ শুধু ঈদ ছাড়া আর একসাথে থাকা সম্ভব নয়।কারণ ডিসেম্বরে আমার শীতকালীন ছুটি থাকে তো ভাইয়ের পরিক্ষা।আর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারির দিকে ওর ছুটি তো আমার পরিক্ষা।

জানেন? আমাদের না চারজনে একসাথে অনেকদিন হল দূরে কোথাও বেড়াতে বের হওয়া হয় না।কারণ আমাদের ছুটি থাকলেও আব্বুর সময় হয় না।তবে কাছাকাছি জায়গায় চারজনে মিলে হাঁটাহাঁটি করেছি, কিছু সময় কাটিয়েছি অনেকবারই।মজার বিষয় কি জানেন? প্রায় চার বছর পর অপ্রত্যাশিতভাবে আমার ধারণাগুলো ভুল করে দিয়ে এবার এতদিনের ছুটি পেয়ে গেলাম। আমরা এখন আবার আগের মত একসাথে থাকি।কিন্তু! আগের মত কেন স্বাদ পাইনা? উত্তর কিছু আছে অবশ্য আমার কাছে। প্রথমত,ছুটিটা যখন পাই,তখন আমার পরিক্ষা চলছিল।তাও আবার কি পরিক্ষা জানেন? সম্মান চতুর্থ বর্ষ।আমি কত বোকা!এই পরিক্ষার মাঝে ছুটি ঘোষণার পর চার পাঁচ ঘন্টা মত খুব আনন্দে ছিলাম।কারণটা হল,পরিক্ষার বইগুলো পড়ার বাড়তি সময় পেয়েছি।খবরটা শুনে ছাত্রীর বাসায় পড়াতে গেলাম।তখনও আমার খুব আনন্দ!এই কয়দিন শুধু পড়াতে যাব আর পড়বো ঘরে বসে।


তারপর বিকালের দিকে রুমে এসে যত চিন্তা ভর করল।ঠান্ডা মাথায় শুয়ে শুয়ে ভেবে দেখলাম,”নাহ! এ তো সম্ভব না। দেশের অবস্থা ভাল না।তাহলে তো হলও বন্ধ করে দেবে।”তারপর থেকে সব কিছু এলোমেলো লাগছে।সেদিন সন্ধ্যায় হলের তত্ত্বাবধায়ক ম্যাডাম আর স্যার আসলেন।তারা আসার পর মিটিং শুরু হওয়ার আগেই আমার ব্যাগ গুছানো শেষ। কারণ আমি খুব ভালভাবেই জানতাম পরদিন ভোর হওয়ার পর আমাদের হল ত্যাগ করতে হবে।কতটা এলোমেলো অবস্থায় ছিলাম সেদিন মানসিকভাবে আমি বলতে পারবো না।
সেখানকার সব কাজ সেরে পরের দিন বিকালের দিকে বাড়ি এসে পৌঁছালাম।হাসিমুখে সেদিন বাড়ি আসিনি আমি।আমার আচরণেও সমস্যা ছিল কয়দিন এবং এখনো মাঝেমাঝে বিগড়ে যাই।করোনা সম্পর্কে যখন প্রথম সংবাদপত্রে লেখালেখি হত তখন খুব ভালভাবে পড়তাম বিষয়গুলো।প্রাণিবিদ্যায় পড়ি বলে বিষয়টাতে আগ্রহ জাগে,আর অন্যদেরও জানাতাম এসব তথ্য।কিন্তু এই কোভিড -১৯ ভাইরাস যে এমনভাবে আমার জীবনেও প্রভাব ফেলবে বুঝতে পারিনি।

হ্যাঁ, কোয়ান্টাইনে আছি।কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন অনেক অভিজ্ঞতাই হচ্ছে।সবকিছুর মিলিয়ে ভালই আছি।বাড়ির আশেপাশে নানা জাতের পাখির আনাগোনা। কোথায় কোন পাখির বাসা তার খোঁজ রাখছি।কোন বাসায় কয়টা ডিম তাও গুনছি।কোন গাছে কোন কোন পতঙ্গের বাসা,কেমন করে লিফ হপার খোলস ছাড়ে,মাকড়সা কত রঙ এর হতে পারে,কত আকারের হতে পারে এই কোয়ারেন্টাইনের অঢেল সময় আমাকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।এসবের মাঝে একটা মা ছাড়া বিড়ালের বাচ্চাও পেয়েছি।তার যত্ন করছি।হল খুললে ওকে আমার কাছে নিয়ে যাবো।আমার অযত্নে থাকা গাছগুলোতে ফুল ফুটছে, সেগুলো দেখার সুযোগ করেছে এই কোয়ারেন্টাইন। গত বছরে কলেজ মাঠে বৃক্ষমেলা হয়েছিল।

সেখান থেকে আম,লিচু,কাঁঠালচাঁপা সহ বেশ কিছু গাছ কিনে এনেছিলাম।লিচু গাছে লিচু,আম গাছে আম আর কাঁঠালচাঁপা গাছে কয়দিন আগে প্রথম ফুল ফুটতে দেখলাম।আজ দ্বিতীয় ফুলটি ফুটেছে।
জানেন, আমি না কোনদিন খোঁজ রাখতাম না আমার মায়ের পালিত হাঁস মুরগীর সংখ্যা কয়টি।এই কিছুদিন আগে আমি আর আমার ভাই হিসাব করে দেখলাম ছোটবড় মিলিয়ে হাঁস মোট ৩৬ টি আর মুরগী ৫ টি।তারা ডিমও পাড়ে। একটা মুরগী তো সারাদিন ডিমে তা দেয়। মানসিক প্রতিবন্ধী নাকি জানিনা!মাঝে মাঝে তা দেয়া ডিম ভেঙে খেয়ে ফেলে!

এসব অপ্রয়োজনীয় কাজের মধ্যে আমি কিন্তু আমার দায়িত্বগুলো এড়িয়ে যাই না। আমার মা বাবার শরীর বেশ ভাল নেই। ঘরের কাজকর্ম ও ঠিক মত করি।হ্যাঁ, সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে।শুধু পড়াটা বাদে।হয় না,আমার পড়ালেখা বাড়িতে হয়না।একসাথে থাকা তো হল,কিন্তু শান্তিমত কেন হল না? ঐ যে! এলোমেলো অশান্ত মন নিয়ে বাড়ি এসেছিলাম।সেই যে না দেয়া পরিক্ষাগুলোর চিন্তা এখনও আমাকে তাড়ায়।আর যখনই মনে পড়ে, তখনই আমার মন মানসিকতা মুষড়ে পড়ে।আমার আচরণে অসামঞ্জস্যতা আসে। আমি ভাল আছি,আবার ভাল নেই। ছুটি প্রয়োজন ছিল, তবে এমন ছুটিতে শান্তি নেই।


আমি আমার আগের করে রাখা পড়াগুলো মনে হয় ভুলে গেছি। পরিক্ষা শেষে আমার অনেক পরিকল্পনা ছিল।আমার হলের প্রতি কিছু দায়িত্ব ছিল যা আমি এপ্রিলে করতে চেয়েছিলাম,আমার মনের মধ্যে জমানো কিছু সাধ ছিল।এই যেমন, পরিক্ষাটা শেষ হলে একা একা অনেক পথ হেঁটে হেঁটে ঘুরব।আমি সময় পেলেই এমন ঘুরি।আবার ভেবেছিলাম, ছুটি পেলে লাইব্রেরিতে গিয়ে একটানা বই পড়ব।আমার না পড়া বইগুলো!যখন মনে হয়,তখন কেমন যেন হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়,ভেতরে ভাঙচুর হয়,কান্না পায়।অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করি।
এত যে বকবক করলাম,আসলে আমি নিজেও জানি,কিছু করার নেই।ভাগ্যে যা ছিল ঘটছে,আর এর সাথেই তাল মিলিয়ে চলতে হবে।তাই নিজেকে সামলে নিয়ে চলছে আমার কোয়ারেন্টাইনে থাকা জীবন।

লেখকঃ সুমাইয়া হাফিজ

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। এর মাঝে একটি এজেন্সিও দিয়েছেন নাম...

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া...

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...