ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাকে (আইসিসিবি) করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে তৈরি করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। অস্থায়ী এ হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে ২ হাজার ১৩টি আইসোলেশন বেড। প্রত্যেক বেডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামও।
আইসিসিবি কর্তৃপক্ষ জানায়, ৪ মে উদ্বোধনের তারিখ মাথায় রেখেই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।
এর আগে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইসিসিবিতে নির্মিত হাসপাতালে সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে বলে ঘোষণা দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ।
জানা গেছে, দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের বড় পরিসরে চিকিৎসার বিষয়ে নানা সংকটের কথা উঠে আসে। এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৫ হাজার শয্যার একটি অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন সরকারকে। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাতে (আইসিসিবি) এই হাসপাতাল নির্মাণের আগ্রহের কথা জানানো হয় সরকারকে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দেওয়ার পর ওই স্থানে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল। পরে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ছাড়াও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এরপর ১২ এপ্রিল থেকে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ তদারকি শুরু করে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। মাত্র ১৮ দিনের মাথায় ৩০ এপ্রিল বসুন্ধরা গ্রুপের আইসিসিবির চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টার রূপান্তরিত হয় দেশে সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল।
সম্প্রতি আইসিসিবিতে করোনা আক্রান্তদের জন্য নির্মিত এ অস্থায়ী হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান। এ সময় আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এমএম জসীম উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান বলেন, ‘করোনা আক্রান্তদের জন্য এই আইসোলেশন সেন্টারটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই দুর্যোগের সময় জাতির জন্য কিছু করতে পেরে আমরা গর্বিত। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ এই হাসপাতাল স্থাপন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল হাসপাতাল হিসেবে এটির ফ্যাসিলিটিজগুলো দেওয়া, আমরা তা নিশ্চিত করে দিয়েছি। আইসোলেশন ইউনিটের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে গেছে। আইসিইউ তৈরি হচ্ছে। কাজ চলছে। এটিও শিগগিরই সম্পন্ন হবে। ৪ মে থেকে এটি চালু হওয়ার কথা। কেন হয়নি তা আমি সঠিক বলতে পারছি না। এছাড়া হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের না। পরিচালনা করবে সরকার।’
এ সময় আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এমএম জসীম উদ্দিন বলেন, ‘৪ মে উদ্বোধনের তারিখ মাথায় রেখেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বুঝে নিতে পারেনি। সরকারের নির্ধারিত এই হাসপাতাল পরিচালক জনবল নিয়োগ দিচ্ছেন। কয়েকদিনের মধ্যে জনবল নিয়োগ হয়ে গেলেই এটি উদ্বোধন করা হবে।’
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইসিসিবি কর্তৃপক্ষ সব কাজ শেষ করেছে। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কাপড়-চোপড়, বিছানার চাদর হাতে যাতে ধুতে না হয় সে জন্য আমরা একটি ওয়াশিং প্লান্ট বিদেশ থেকে আনার চেষ্টা করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। সাতক্ষীরা থেকে আমরা একটি ওয়াশিং প্লান্ট এনেছি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে এটি স্থাপন করা হবে। এটি স্থাপনের পর আমরা এই হাসপাতাল উদ্বোধন করতে রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবো।’