কুবি প্রতিনিধি: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষিত হওয়ায় এখন বাড়িতে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই সংকটকালীন মুহূর্তে মেস ভাড়া পরিশোধের চাপ তাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলমান করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আশ্বাস দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী। তিনি জানান, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আবাসন সংকট থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই কুমিল্লা শহর, কোটবাড়ি ও ক্যাম্পাসের আশপাশের বিভিন্ন মেসে বসবাস করতে হয়। তাদের অনেকেই পড়াশোনার খরচ নির্বাহ করার জন্য একাধিক টিউশন, কোচিং, পার্ট টাইম চাকুরি ইত্যাদি পেশার সাথে যুক্ত। এমনকি কেউ কেউ পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে সংসার খরচেও এই আয় থেকে অর্থের যোগান দিয়ে থাকেন। বর্তমানে তাদের এসব আয়ের উৎসও বন্ধ। এমন অবস্থায় মেস ভাড়া পরিশোধের চাপে অসহায়বোধ করছেন শিক্ষার্থীরা।
মেস ভাড়া পরিশোধে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা এই প্রতিবেদককে জানাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম আবর্তনের শিক্ষার্থী দেবপ্রকাশ চক্রবর্তী বলেন, ছুটির পর থেকে মেস ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছি। তবে মেস ভাড়া ও গ্যাস বিলের জন্য বাড়িওয়ালা প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আমি টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালাই। করোনার কারণে টিউশনিও নেই। কোর্ট কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমার আইনজীবী বাবার আয়ও এখন বন্ধ।
দেবপ্রকাশ চক্রবর্তীর মতো আরও শত শত শিক্ষার্থী একই ধরণের সমস্যায় ভুক্তভোগী। কারো কারো পরিস্থিতি আরও করুণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোতেও ইতোমধ্যে এই সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন শিক্ষার্থীরা৷ তারা বলছেন ভাড়া পরিশোধের জন্য বারবার ফোন করছে মেস মালিকরা। কিন্তু করোনার এই দুর্যোগ ও লকডাউনে কর্মহীনতায় ভাড়া পরিশোধ প্রায় অসম্ভব। মানবিক দিক বিবেচনা করে মেস ভাড়া অন্তত আংশিক মওকুফ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এমন আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগের ব্যাপারে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আপাতত দুশ্চিন্তা না করে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করুক৷ এই মহামারীর সময়ে মালিক পক্ষের প্রতি মেস ভাড়ার জন্য চাপ না দেয়ার অনুরোধ করেছি। উপাচার্য মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদসমূহের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে শীঘ্রই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি মিটিং করার কথা রয়েছে৷ সেখানে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। সিদ্ধান্তক্রমে আনুষ্ঠানিক চিঠিও পাঠানো হতে পারে৷’
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলছেন, ‘শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুরোধ করলে বা চিঠি পাঠালে মেস মালিকরা মানবে না। এতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের দিক বিবেচনা করে অন্তত এক-দুই মাসের ভাড়া মওকুফ বা হ্রাস করে সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশনের মেয়র বা সদর দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো। ইতিমধ্যে আমি কয়েকজনের সাথে কথা বলেছিও।’
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী জানান, ‘দুর্যোগের এই সময়ে আমরা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে মেস ভাড়ার প্রসঙ্গটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একক সিদ্ধান্ত কার্যকরী হবে না। এতে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বিত সিদ্ধান্ত লাগবে। এজন্য ব্যাপারটি নিয়ে আমি কুমিল্লার ডিসি’র (জেলা প্রশাসক) সাথে কথা বলবো। কথা বলে দেখি কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’