করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিশুদের শরীরে দেখা দিচ্ছে নতুন এক রোগ। চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে সম্ভবত এই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এটা খুবই বিরল একটি রোগ যার নাম কাওয়াসাকি ডিজিজ শক সিনড্রম। শরীরে আকস্মিক একটা আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় এই উপসর্গ প্রকাশ পায়।
এরই মধ্যে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু শিশু বিরল এই প্রদাহজনিত রোগে শিকার হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এই প্রদাহজনিত রোগের সঙ্গে করোনাভাইরাসের যোগাযোগ রয়েছে। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করেছে। অনেক শিশুকে ইনটেনসিভ কেয়ারেও রাখতে হয়েছে।
শুধু ব্রিটেনেই এমন উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছে ১০০ শিশু। জানা গেছে, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও শিশুদের মধ্যেও একই ধরনের উপসর্গ দেখা গেছে। গত এপ্রিল মাসেই ব্রিটিশ ডাক্তাররা সতর্ক করে দেয়, শিশুদের মধ্যে বিরল ও বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এরপর লন্ডনে আট শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে, এর মধ্যে ১৪ বছরের একজন এই রোগে মারা যায়।
শিশুদের ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের নতুন ধারা!
এসব শিশুদের বেশিরভাগই সাধারণ কয়েকটি উপসর্গ নিয়ে লন্ডনের এভেলিনা চিলড্রেনস হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের সবারই প্রচণ্ড জ্বর, ত্বকে র্যাশ, লাল চোখ, শরীর ফুলে যাওয়া এবং ব্যথার উপসর্গ ছিল। এদের কারো ফুসফুস বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়নি।
চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণের নতুন একটা ধারা। এর সঙ্গে মিল আছে কাওয়াসাকি শক সিনড্রমের। এই প্রতিক্রিয়া একটা বিরল রোগ উপসর্গ, যা প্রধানত দেখা যায় পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে র্যাশ, ঘাড়ের গ্রন্থিগুলো ফুলে ওঠা এবং ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া। তবে এই নতুন উপসর্গ দেখা গেছে শিশু থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বয়সীদের ক্ষেত্রেও। এদের মধ্যে অনেকের কঠিন জটিলতা তৈরি হয়েছে।
লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের শিশু সংক্রামক রোগ ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক বিভাগের ড. লিজ হুইটেকার বলছেন, মহামারির এই সময় শিশুদের মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা দেয়ার কারণে অভিভাবকরা ভাবছেন করোনাভাইরাসের সঙ্গে এর যোগাযোগ রয়েছে।
রোগ ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক রয়্যাল কলেজের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক রাসেল ভাইনার বলছেন, যেসব শিশু এই রোগের শিকার হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসায় ভালো হয়ে উঠছে। যদিও এই উপসর্গগুলো ব্যতিক্রমী ও বিরল।
ইম্পিরিয়াল কলেজেরই আরেকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, যেসব শিশুদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই নেগেটিভ ফল এসেছে। তবে অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় তাদের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি ধরা পড়েছে।
চিকিৎসকরা সন্দেহ করছেন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শরীরে যে অস্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে তার থেকে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে। কারণ নতুন এই উপসর্গের কথা জানা গেছে মাত্র তিন সপ্তাহ আগে।
শিশুদের মধ্যে একই ধরনের উপসর্গ দেখা গেছে আমেরিকা, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে। নিউইয়র্কের গর্ভনর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১৫টি রাজ্যে শিশুদের এই রোগ উপসর্গ দেখা গেছে।
(সূত্র: বিবিসি)