সাম্প্রতিক সংবাদের পাঠকদের হয়তো মনে আছে বংশালের করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী সেই নারীর গল্প যিনি ঢাকা মেডিকেলে কয়েকদিন আগে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলেন।
একদিকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছিলো, অন্যদিকে করোনার লক্ষণ প্রকট ছিলো পুরোন ঢাকার সেই নারী কামরুন্নাহারের শরীরে।
করোনায় বন্ধ ছিলো রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলো। কামরুন্নাহারকে কোথায় চিকিৎসা করাবেন আর কোথায় সন্তান প্রসব করাবেন এই নিয়ে মহামুশকিলে পড়ে যান স্বজনেরা।
উপায়ান্তর না পেয়ে পুলিশের সহায়তা চেয়ে কল দিলেন। বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাহীন ফকির-বিপিএম সঙ্গীয় ফোর্সসহ দ্রুত ওই বাসায় যান।
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তার স্বামীকে পিপিই, হ্যান্ড গ্লোভস, মাস্ক পরিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে পুলিশের গাড়ীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এবং পরীক্ষায় করোনা সনাক্ত হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শে নিজ বাসাতেই চিকিৎসা চলছিলো ওই সন্তানসম্ভবা নারীর।
১১ মে সকাল অনুমান সাড়ে আটটায় সেই নারীর প্রসব বেদনা শুরু হলে কোন অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে না পেরে তার স্বামী আবারও থানা পুলিশের সহায়তা চান। বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাহীন ফকির-বিপিএম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ওই বাসায় যান।
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তার স্বামীকে পিপিই, হ্যান্ড গ্লোভস, মাস্ক পরিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে পুলিশের গাড়ীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ওই নারী একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বংশাল থানা ওই নারীকে সহযোগিতা করেই দায়িত্বের ইতি টানেনি, বরং নবজাতক সন্তান ও পরিবারটির নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহীন ফকির বিপিএম।
নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়ার এক পর্যায়ে শাহীন ফকির জানতে পারেন সেই নারীর স্বামী মোঃ জাহিদুর রহমান বংশাল এলাকায় একটি দোকানে কাগজের ব্যবসা করেন।
উনার স্ত্রী করোনা পজিটিভ হওয়ায় ব্যবসা সমিতি থেকে তাকে দোকানে যেতে নিষেধ করা হয়। এতে বিপাকে পড়েন তিনি। ব্যবসায় বন্ধ থাকায় পড়েন আর্থিক সংকটে। এমন অবস্থা শুনে কোন রকম কালক্ষেপন না করেই পুলিশ জরুরী খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির হন জাহিদুরের বাসায়।
বর্তমানে প্রসূতি কামরুন্নাহার ও নবজাতক শিশু সূস্থ্য আছে। এক সপ্তাহ পরে মা ও শিশুর করোনা ভাইরাস পরীক্ষা হবে।
মা ও শিশু এবং তার পরিবারে সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান ওসি
মোঃ শাহীন ফকির।
প্রসূতি নারীকে সহায়তা করে ঐখানেই থেমে থাকেনি বংশাল থানা পুলিশ।
থানা এলাকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অন্যান্য রোগীরা যারা বাসায় আইসোলেশন থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন তাদেরকে প্রতিনিয়ত খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা করছে।
গণমাধ্যম এর সাথে আলাপকালে সেই নারীর ভাই মো: মাইনুদ্দিন পুলিশের এই মানবিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং সীমাহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ঢাকা কলেজের ইংরেজির এই স্নাতক ও বারিধারার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বলেন, করোনায় পুলিশ সদস্যরা জনগনের সবচেয়ে কাছের বন্ধুর ভূমিকা গ্রহন করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের এই অবদানকে আমরা চিরদিন হৃদয়ের গভীরে ধারন করবো।