বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আরও গতি ও শক্তি সঞ্চার করে এক্সট্রিম সিভিয়ার সাইক্লোন (অতি প্রবল শক্তিশালী)' থেকে
সুপার সাইক্লোনে’ রূপ নিয়েছে। চলমান করোনা মহামারীর মধ্যে এই ঝড়ের হানা বাংলাদেশ ও ভারতের লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝড়টি আজ (১৯ মে) শেষরাতে প্রচন্ড বেগে ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছাস নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএস) জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নি সেন্টারের সোমবার (১৮ মে) রাতে রেকর্ড করা তথ্যানুয়ায়ি, সুপার সাইক্লোন আম্পান বঙ্গোপসাগরে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী (গতিবেগ ২৭০ কি.মি./ঘন্টা) ঝড়। সতর্ক কন্দ্রেটি বলছে, এরপর আম্পান কিছুটা দুর্বল হলেও এখনও এর গতি ২৪০ কি.মি/ঘ্ন্টা, যা একটি শক্তিশালী আটলান্টিক হারিকেন-৪ ক্যাটাগরির বা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের সুপার টাইফুনের সমতুল্য। ঝড়টি বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে বলে তথ্য দিয়েছে সেন্টারটি।
এই পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ বিশ্লেষণ করে ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে উপকূলে আঘাত হানলেও এ বিস্তৃতি থাকবে বাংলাদেশের হাতিয়া পর্যন্ত। বুধবার (১৯ মে) দুপুর নাগাদ উপকূলে আঘাত হানার সময় ঝড়টির তীব্রতা এখনকার চেয়ে কমে আসবে বলে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের অনুমান; তবে তখনও তা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপে থাকবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস সোমবার (১৮ মে) ২০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্পান উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সোমবার রাত ৯টায় চট্টগ্রামসমুদ্রবন্দর থেকে ১১২০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯১০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বঙ্গোপসাগরের জানা ইতিহাসে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন হিসেবে ধরা হচ্ছে আম্পানকে। প্রথম সুপার সাইক্লোনটি ছিল ১৯৯৯ সালের উড়িষ্যা সাইক্লোন। এদিকে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর, তাতে তছনছ হয়েছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, প্রাণ হারিয়েছিল দুই হাজারের বেশি মানুষ। তার এক যুগ পরে এখন যে ঘূর্ণিঝড়ের সামনে বাংলাদেশ, সেই আম্পান সিডরের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর, পুনঃ ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেক ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে