বৈশ্বিক ঝড় নির্ণয়ক বিখ্যাত সংস্থা আকুওয়েদার আম্ফানকে ১৯৯৯ সালের পরে বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোন হিসাবে বর্ণনা করেছে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়ে এটি বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতীয় উপকূলজুড়ে চরম আঘাত হানতে পারে। আকুওয়েদারের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক পূর্বাভাসক জেসন নিকোলস আজ বলেছেন, ‘১৯৯৯ এর উড়িষ্যা সাইক্লোনের পরে আম্ফান বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোনিক ঝড়। বুধবারের শেষের দিকে দু’দেশের উপকূলরেখায় এটি আঘাত হানতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংস্থা জানিয়েছে, আজ প্রত্যুষে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এখানকার অনুকূল পরিবেশ এটিকে আরো শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করছে।
মার্কিন যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের বরাত দিয়ে আজ সকালে সিএনএন জানিয়েছে, ‘সোমবার রাতে দেখা যায়, আম্ফান বঙ্গোপসাগরে এ যাবত কাল পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হয়ে উঠেছে, এটি ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত (ঘণ্টায় ১৬৫ মাইল) অব্যাহত বাতাসের গতিবেগের সঙ্গে তীব্রতর হচ্ছে।
বাংলাদেশী এবং ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা এটিকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমে সরে যাওয়ার এবং ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নিকটবর্তী হাতিয়া-ভোলা এবং ভারতের দিঘার মধ্যবর্তী দুটি দেশের উপকূলরেখা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়ে আজ সকালে বাংলাদেশী ও ভারতীয় মিলিত অফিস তাদের প্রতিবেদন আপডেট করেছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় সুপার সাইক্লোনটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৮৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজারের ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা বন্দরের ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সকাল পর্যন্ত গত ছয় ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি প্রতি ঘন্টায় ১৪ কিলোমিটার বেগে এগিয়েছে।
আকুওয়েদার বলেছে, সর্বশেষ গতিবিধি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আম্ফান উপকূলীয় তটরেখ বরাবর এসে একটি সুপার সাইক্লোন অথবা একটি অত্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হবে।
আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, স্থলভাগে আঘাত হানার সময় আম্ফান পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ জুড়ে জীবন ও সম্পদের জন্য চরম হুমকী হয়ে উঠবে বলে আশংকা করা হচ্ছে- যাতে যুক্ত হতে পারে ভয়ঙ্কর উপকূলীয় ঝড়, ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস।
এটি বিশেষতভাবে সতর্ক করে দিয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণে খুবই ন্মিমাঞ্চল হওয়ায় আম্ফানের প্রভাবের উচ্চ জ্বলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলটি প্লাবিত হওয়ার আশংকা সবচেয়ে বেশি।
আকুওয়েদারের পূর্বভাস অনুসারে আম্ফান সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড়োহাওয়ার সঙ্গে ‘সুপার সাইক্লোনিক ঝড়’ হয়ে ওঠেছে আম্ফান, যা আটলান্টিক এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অববাহিকায় বিভাগের ক্যাটাগরি-৫ হারিকেন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
১৯৯৯ ওড়িষ্যায় ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২৬০ কিলো মিটার মিটার।