মোঃইয়াসিন,সাভারঃ
চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসকে সামনে রেখে আসছে অর্থবছরে কেমন হবে জাতীয় বাজেট(২০২০-২১)?অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পরা এই জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরন সম্ভব কিনা এই নিয়ে আলোচনা,সমালোচনা চলছে বিভিন্ন সচেতন মহলে।
তেমনি ভাবে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে এবং সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা’র সঞ্চালনায় বৃহস্পতিবার ( ২৮ মে )“জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১: করোনায় অনিশ্চিত জীবন-জীবিকা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট প্রত্যাশা” বিষয়ক ভার্চুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপটি যৌথভাবে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এবং ৫ টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন- ডিসিএফ, এনসিডিডব্লিউ, সীতাকুন্ড ফেডারেশন, টার্নিং পয়েন্ট ও ডব্লিউডিডিএফ এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও সমাজকল্যান বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ।
সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন- গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন এর পক্ষে আমিনুর রহমান।
এসময় আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আলবার্ট মোল্লা বলেন , প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বরাদ্দ সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক ক্ষমতায়ন খাতের মধ্যে হয়ে থাকে যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল, যেমন- চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের বাজেট মোট বাজেটের ১৪.২১%, এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর খাতের বাজেটের মাত্র ২.১৯% যা মোট বাজেটের মাত্র ০.৩১%। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে যেমন- খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা, গৃহহীণদের জন্য গৃহ নির্মান ইত্যাদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত বলে মনে করেন। এছাড়া ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পূনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ বিষয়টিকে বিবেচনায় এনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা , দুস্থ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খাদ্য সহায়তা, করোনার কারনে চাকরি হারানো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ।
কোভিড মোকাবিলায় তিনি জাতীয় বাজেটে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন যার মধ্যে অন্যতম, সকল অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য আগামী ৯ থেকে ১২ মাসের খাদ্য রেশনের ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা নিরুপন, সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বিশেষ বীমা ও কর্মরত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পেনশন স্কীম চালু, করোনার কারনে চাকরী হারানো ও বেকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বেকার ভাতা চালু এবং মধ্য মেয়াদে আত্ম কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বৃদ্ধি, গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কেয়ারগিভারদের জন্য মাসিক ভিত্তিতে ভাতার ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা ১৫০০ টাকায় উন্নীত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের জন্য বাজেট বরাদ্দ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা অন্যতম”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের উপর বিশেষ জোর দেবার দাবি তুলে ধরেন। ভাস্কর ভট্টাচার্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে চলতি বাজেটে অ্যাসেসটিভ টেকনোলজি ফান্ড, ইনফরমেশন অ্যাকসেসিবিলিটি ফান্ড গঠন করে বাজেট বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিক সেলিম সামাদ বলেন গণমাধ্যমের সাথে যৌথভাবে এডভোকেসি পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দাবি নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। সিডিডি’র নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান বলেন প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ৫% প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। বরাদ্দকৃত বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উপর জোর দেবার প্রস্তাব করেন সাইটসেভারস এর কান্ট্রি ডিরেকটর অমরিতা রেজিনা রোজারিও।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় এমপি, অ্যারোমা দত্ত বলেন ,আলোচনা সভায় উঠে আসা দাবিগুলোকে মহান সংসদে তুলে ধরা হবে। তিনি নারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদাকে আরও গুরুত্বের সাথে বিবেচনার কথা তুলে ধরেন। তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগ পর্যবেক্ষণের জন্য বেসরকারি সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
উক্ত আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থার দেশস্থ প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, সুশীল সমাজ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরের প্রতিনিধিবৃন্দ প্রমুখ।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারপারসন জনাব সি এম তোফায়েল সামি’র ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে সংলাপটি সমাপ্ত হয়।