কয়েক বছরের ব্যবধানেই আমরা গুগল সার্চ করা অনেক কমিয়ে দিয়েছি, আমাদের ডিরেকশন ক্যালেন্ডার, এড্রেস বুক, ভিডিও, বিনোদন, ভিডিও বার্তা অথবা মোবাইল কলের জন্য এখন আর আগের মত গুগল সার্চ করি না। প্রতিদিন আমরা কোটি কোটি মানুষ আমাদের ঘরের খবর ফেসবুকে পোষ্ট করছি, অবলীলায় শেয়ার করছি কারা আমাদের ভাই-বোন-বন্ধু অথবা কলিগ।
আমরা প্রতিদিন মিলিয়ন মিলিয়ন অ্যাপস ডাউনলোড করি এবং এর উপরে সব কাজের জন্য নির্ভর করি, ব্যাংকিং থেকে রান্নাবান্না অথবা কিভাবে বাচ্চার ছবি সংরক্ষণ করব তার জন্য। আমরা ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছি আমাদের ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন, আইপ্যাড, টাইভোস, ক্যাবল বক্স, পিএসথ্রি, নাইনটেনডোস, এইচডিটিভি, এক্সবক্স এবং অ্যাপল টিভির মাধ্যমে।
এই প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সুবিধা অনেক। গত ১০০ বছরে শুধুমাত্র চিকিৎসা ক্ষেত্রেই যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে তাতে মানুষের জীবনকাল প্রায় দ্বিগুন হয়েছে, শিশু মৃত্যুর হার কমে এসেছে ১০ ভাগের ১ ভাগে। পৃথিবীব্যাপী মাথা পিছু আয় প্রায় ৩ গুন হয়েছে। উন্নত মানের শিক্ষা এতদিন যাদের কাছে স্বপ্নের মত ছিল তা আজ বিনা মূল্যে ঘরে বসেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে খান একাডেমীর (Khan Academy)মত প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে। এবং সারা বিশ্বে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে যা অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনছে।
ইন্টারনেটের এই আন্ত-যোগাযোগের ফলের সারা পৃথিবীর সুবিধা বঞ্চিত মানুষ একত্রিত হতে পারছে খুব সহজেই যা আগে কল্পনাও করা যেত না। বাংলাদেশী কোন নারী ঘরে বসেই এখন লুডু খেলতে পারছে কানাডিয়ান কোন সম্পূর্ণ অপরিচিত বন্ধুর সাথে। ইন্ডিয়ার ব্যাঙ্গালুড়ুর কোন চিকিৎসক নিজের চেম্বারে বসেই আমেরিকার ফ্লোরিডার কোন এক্সরে রিপোর্ট দেখতে পারছে। দক্ষিন আফ্রিকার কোন কৃষক তার মোবাইল ফোন দিয়েই এমআইটির(MIT)কোন পিএইচডি ক্যন্ডিডেটের মতই একই শস্যের রিপোর্ট দেখতে পাচ্ছে। এই আন্ত যোগাযোগই ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় শক্তি, দিনে দিনে এই গ্লোবাল নেটওয়ার্ক যতই বড় হচ্ছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা। আমদের আধুনিক প্রযুক্তির দুনিয়ায় এমন অনেক কিছুই আছে যা জীবনকে করছে গতিশীল।
ইন্টারনেটের এই আধুনিক দুনিয়ার এত এত সুবিধা থাকার পাশাপাশি এর কিছু মন্দ দিকও আছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায় সবকিছুই যেমন- বৈদ্যুতিক গ্রিড, আবহাওয়ার পূর্ভাবাস, ফায়ার সার্ভিস সিস্টেম, টেলিকমিউনিকেশন এমনকি অফিসের লিফটও কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন আমরা গ্লোবাল ইনফরমেশন গ্রিডে অথবা বিশ্ব তথ্য ভাণ্ডারে যে পরিমাণ তথ্য জমা করছি একবারও ভেবে দেখেছি কি এর পরিণাম কি হতে পারে?
আপনার তৈরী করা এই ডাটা শেষে গোপনে বিক্রি হয় হুয়াইট ও ডার্ক ওয়েবে, হ্যাক হয়, শেয়ার হয় আপনার কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই!
আমরা কি ভেবে দেখেছি কি হতে পারে যদি কখনো আমাদের আধুনিক সমাজের এই প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ভেঙে পড়ে? মানব জাতির কোন ব্যাক-আপ প্ল্যান আছে কী?
বি. কে. আহমেদ, Information Security Analyst