সারাবিশ্বে কমলেও লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল ও মেক্সিকো এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। যদিও ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর কোন তথ্য প্রকাশ করছে না। করোনা আক্রান্তের এক নম্বরে থাকা যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়া, চতুর্থ স্থানে থাকা স্পেন, পঞ্চম অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশে করোনার তাণ্ডব প্রতিনিয়ত কমে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১০৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে; এই সময়ে মারা গেছেন ৬ জন।
গত কিছুদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান, লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল, পেরু, চিলি ও মেক্সিকো এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। এর চিলি শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ১৩তম এবং কাতার করোনা সংক্রমণের ২০তম অবস্থানে রয়েছে।
৯ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ওর্য়াল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় বিশে^র বিভিন্ন দেশে নতুন ২৮ হাজার ৯১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৮৬৪ জনের। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশেই শনাক্ত হয়েছে মোট ১৭ হাজার ৮০৪ জন করোনা রোগী। ২৪ ঘণ্টায় এই তিনদেশে করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪৮১ জন।
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ নিলেও দক্ষিণ এশিয়ারই দেশ শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপ সংক্রমণের শুরুতেই কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে করোনার বিস্তার রোধ করেছে। নেপালেও করোনা খুব বেশি রাজত্ব করতে পারছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পর লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলেই সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হয়েছে। ব্রাজিল সরকার করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বরং নাগরিকদের সতর্ক না করে দেশটির প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ ব্যক্তিরা করোনাভাইরাস নিয়ে নানা রকম বিরূপ মন্তব্য করেন, করোনার ভয়ঙ্কর রূপকে তারা খুব একটা আমলেও নেননি।
৮ জুনের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলে মোট ৭ লাখ ১০ হাজার ৮৮৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে মারা গেছে ৩৭ হাজার ৩১২ জন।
লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকো করোনা সংক্রমণের শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ১৪তম স্থানে রয়েছে। এই দেশটিও করোনার বিধ্বস্ত রূপকে খুব একটা আমলে নেয়নি। করোনা ঠেকাতে আগাম তেমন কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি। মেক্সিকোতে ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৯৯৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩৫৪ জন। মেক্সিকোতে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ১০২ জন। মোট মারা গেছে ১৪ হাজার ৫৩ জন।
লাতিন আমেরিকার অপর দেশ পেরু করোনা সংক্রমণের শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে ৮তম অবস্থানে। এই দেশটিও কিছুদিন ধরে করোনা সংক্রমণের কোন তথ্য প্রকাশ করছে না।
করোনার রাজত্ব যেসব দেশে ঢুকেনি :
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনে উহার শহরে উৎপত্তি হলেও চীনের সীমান্ত সংলগ্ন দেশ ভিয়েতনাম প্রথম থেকেই কঠোর লকডাউনের (অবরুদ্ধ) মাধ্যমে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে করোনা পরিস্থিতি।
ভিয়েতনামে গত ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ওই সময় দেশটির হো চি মিন শহরে দু’জন চীনা নাগরিককে করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। এরপরই দেশটিতে করোনাকে মহামারী ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৩ ফেব্রুয়ারি আরও কয়েকজন রোগী শনাক্ত হয় দেশটিতে। পরে এদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি মোকাবিলায় হ্যানয়ের অদূরের সোন লুই গ্রামের ১০ হাজার ৬০০ জন্য নাগরিককে ২০ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে। ভিয়েতনামে গত ২৬ মে পর্যন্ত ৩২৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৮ জুন পর্যন্ত দেশটিতে করোনা রোগী ছিল মাত্র ৩৩২ জন। তবে ভিয়েতনামে করোনায় কারোর মৃত্যু হয়নি।
দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন কার্যকর করে ইতোমধ্যেই নিউজিল্যান্ড সরকার দেশকে শতভাগ করোনাভাইরাস মুক্ত ঘোষণা করেছে। নিউ জিল্যান্ডে প্রথম একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপরই নড়েচড়ে বসে দেশটির সরকার। কিছুটা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরপরই দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড। দু’দিন আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে তার দেশকে শতভাগ করোনা মুক্ত ঘোষণা করেন। গত ২২ মে পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল এক হাজার ৫০৪ জন। এরপর আর কোন রোগী পাওয়া যায়নি নিউজিল্যান্ডে। দেশটিতে করোনায় মারা গেছে মাত্র ২২ জন।
জাপানে গত ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে ৫৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করে করোনার প্রার্দুভাব ঠেকিয়ে দিয়েছে জাপান। গত দু’দিন ধরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে না জাপানে। ৮ জুন পর্যন্ত দেশটিতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৭ হাজার ১৭৪ জন। দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে মোট ৯১৬ জনের।
বিদেশ ফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টিন কঠোরভাবে কার্যকর, স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ-শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান দক্ষতার সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছে।