ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড বা শীর্ষ জঙ্গি বলে যাকে বর্ণনা করা হয়, সেই জাকির মুসা বৃহস্পতিবার ভারত শাসিত কাশ্মীরে নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর পর তার জানাজায় ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমবেত হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ।
তার মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই কাশ্মীরে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বলা হচ্ছে, ঐ অঞ্চলে নতুন করে বড় সহিংসতা শুরু হলো বলে। খবর বিবিসি বাংলার
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কাশ্মীরের দক্ষিণে ত্রাল জেলায় জাকির মুসাকে বন্দি করার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
কে এই জাকির মুসা?
জাকির মুসার আসল নাম জাকির রাশিদ ভাট। ২০১৬ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত ক্যারিশমাটিক জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এই জাকির।
বুরহান ওয়ানি নিহত হবার পর কাশ্মীরে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয়েছিল।
নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন সে সময়।
জাকির মুসা হিযবুল মুজাহিদিনের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে ২০১৭ সালে আল কায়েদার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন। কাশ্মীরে ভারত শাসনের বিরোধিতাকারী অন্যতম বড় গ্রুপগুলোর একটি এই হিযবুল মুজাহিদিন।
জাকির মুসা পরে আনসার গাযওয়াত-উল-হিন্দ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। বলা হয় ঐ দলটির পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রয়েছে।
ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ওয়ানির মৃত্যুর পর এ পর্যন্ত জাকির মুসার নিহত হওয়াই দেশটির সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় বিজয়।
তবে এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে জাকির মুসার আনসার গাযওয়াত-উল-হিন্দ দলে কত সংখ্যক যোদ্ধা ছিলো।
জাকির মুসার মৃত্যু নিশ্চিত করে সেনাবাহিনীর দেয়া এক লাইনের বিবৃতিতে ছিলো, পুলাওয়ামাতে অভিযানে জাকির মুসা নামে একজন সন্ত্রাসী নিহত। অস্ত্র এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে।
জাকির মুসার জানাজা
সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, জাকির মুসার জানাজায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। সে সময় প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় মানুষ অপেক্ষা করে।
শ্রীনগর সংলগ্ন একমাত্র হাইওয়ের কাছে সমবেত শত শত মানুষ “মুসা মুসা জাকির মুসা” বলে চিৎকার করতে থাকে। অনেকে সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারে।
নতুন সংঘাতের আশংকা
কাশ্মীরের সাংবাদিক সামির ইয়াসির বিবিসিকে জানিয়েছেন, জাকির মুসার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কর্মকর্তারা সংঘর্ষ-সহিংসতা শুরু হয়ে যেতে পারে এমন আশংকায় রয়েছেন।
আস্তে আস্তে এ খবর প্রকাশের পর শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছে। ইয়াসির জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।
মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং কারফিউ জারি করা হয়েছে। শুক্রবারে স্কুল ও কলেজসমূহ বন্ধ ছিলো।
ফেব্রুয়ারিতে পুলাওয়ামা হামলা
ফেব্রুয়ারিতে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক জঙ্গি আক্রমণে অন্তত ৪০ জন আধাসামরিক পুলিশ সদস্য নিহত হয়।
এরপর সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাবার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
সংঘাতের ইতিহাস
১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাবার আগে থেকেই কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।
ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স এ্যাক্ট নামে ব্রিটিশ ভারত বিভক্তির যে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, কাশ্মীর তার ইচ্ছে অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তান – যে কোন রাষ্ট্রেই যোগ দিতে পারবে।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের অনেকেই চায় না যে এলাকাটি ভারতের শাসনে থাকুক। তারা চায় – হয় পূর্ণ স্বাধীনতা, অথবা পাকিস্তানের সাথে সংযুক্তি। ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম। এটিই হচ্ছে ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ভারত অভিযোগ করে, পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে যোদ্ধাদের পাঠাচ্ছে – তবে পাকিস্তান তা বরাবরই অস্বীকার করে।
১৯৮৯ সালের পর থেকে এখানে প্রায় নিয়মিত সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।