ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তারই স্থলাভিষিক্ত হন মেয়র আতিকুল ইসলাম। নির্বাচিত হওয়ার ১০ মাসের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য কোনও কিছু পরিবর্তন ঘটাতে না পারলেও মাঠে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। যেকোনও কর্মসূচি বাস্তবায়নে চেষ্টা করেছেন তিনি। কথাবার্তায় অনেকটা কৌশলী আতিকুল ইসলামের কোনও কাজই বিতর্কের জন্ম দেয়নি। আর এ কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উত্তর সিটির মেয়র পদে তার ওপরেই আস্থা রেখেছে, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আওয়ামী লীগের কোনও পদে না থাকা আতিকের হিসাব কিছুটা ভিন্ন বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাদের দাবি, উত্তর সিটির মেয়র পদটি আওয়ামী লীগের কাছে কিছুটা ব্যতিক্রম। যে কারণে সিটি করপোরেশন বিভক্তির পর থেকেই ডিএনসিসির মেয়র পদে দলীয় নেতাদের বাইরে ভিন্ন পেশার ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ রেখেছে আওয়ামী লীগ। এ কারণেই প্রথমে আনিসুল হক, পরে তার ‘উত্তরসূরি’ আতিকুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছেন।
সম্প্রতি দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে উত্তর সিটিতে ডেঙ্গুবিরোধী নানা কর্মসূচি পরিচালনা করেন আতিকুল ইসলাম। যদিও সেসব কর্মসূচি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তেমন একটা সফল না হলেও বিতর্কের জন্ম দেয়নি। গণমাধ্যমের সামনেও তিনি কথা বলেছেন অনেকটা কৌশলে। সময় কাটিয়েছেন ব্যস্ততার মধ্যে। চেষ্টা করেছেন সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও সচেতন করতে। গত ১০ মাসে কিছুটা ইতিবাচক কর্মকাণ্ড দেখাতে সক্ষম হয়েছেন আতিক। এসব কারণে মেয়র পদে ফের তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তবে নগর পরিকল্পনাবিদদের দাবি, এখনও মেয়র হিসেবে আতিকুল ইসলামের মূল্যায়ন করার সময় আসেনি। তিনি পর্যাপ্ত সময় পাননি। তবে যেটুকু সময় তিনি পেয়েছেন, তাতে দৃশ্যমান কোনও কাজ করতে না পারলেও অনেক অ্যাক্টিভ ছিলেন তিনি। এছাড়া, উত্তর সিটিতে তার বিপরীতে শক্ত কোনও প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।
জানতে চাইলে মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আতিকুল ইসলাম বেশি সময় পাননি। যে সময় পেয়েছেন সেই সময়ে তিনি অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তিনি বেশি কিছু কাজ দেখাতে পারেননি। তবে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। কাজ আদায়ের জন্য একজন নির্বাচিত প্রতিনিধিকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত। সে বিবেচনায় হয়তো আওয়ামী লীগ তাকে আবারও পছন্দ করেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কোনও কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ নেই। তাছাড়া, তিনি পর্যাপ্ত সময়ও পাননি। এসব কারণেই তাকে আরও একটি টার্মের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় কলেজ শিক্ষার্থী রাজীব-দিয়ার মৃত্যুর পর গত ১৯ মার্চ সুপ্রভাত পরিবহনের বাসচাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার চৌধুরী নিহত হন। ওই ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। তখন মেয়র আতিকুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেটি মোকাবিলা করেন। এছাড়া ডেঙ্গু পরিস্থিতির সময় চিরুনি অভিযান ও ধুলা দূষণে দৃশ্যমান কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নজর কেড়েছেন তিনি।
উত্তর সিটিতে মেয়র আতিকুল ইসলামের বিপরীতে শক্ত কোনও প্রার্থীও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেনি। যেকারণে অনেকটা নির্ভার ছিলেন তিনি।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক জয় লাভ করেন। কিন্তু ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যুতে মেয়রের আসনটি শূন্য হয়। পরে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পুনরায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩০২ ভোট পেয়ে আতিকুল ইসলাম জয়লাভ করেন।