বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হলেও মানসম্পন্ন ওষুধ ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে দেশের মানুষের কাছে বিশ্বস্ত নাম স্কয়ার গ্রুপ। এই গ্রুপের হাসপাতাল ‘স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেড’ করোনা মহামারিতে চিকিৎসা সেবায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষ করে কভিড-১৯ আক্রান্ত এবং যারা আক্রান্ত নয়, তাদের পৃথকভাবে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে সফল বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে অনন্য ভূমিকায় রয়েছে এই হাসপাতালটি। এরই মধ্যে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক ও স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান এবং পরিচালক ( মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. মীর্জা নাজিম উদ্দিন।
এ ছাড়া এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাদানে যুক্ত প্রায় ২৩২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণ সচল রেখেছে স্কয়ার হাসপাতাল। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেড স্কয়ার গ্রুপের এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে কোনো লাভ নেওয়া হয় না। একেবারে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এই হাসপাতাল থেকে যে লাভ হয় তা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের জন্য পুনর্বিনিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি হাসপাতালে যারা চিকিৎসা সেবাদানে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের বেতন-ভাতাসহ কল্যাণমূলক কার্যক্রমের ব্যয়ও হাসপাতালের আয়েই নির্বাহ করা হয়। ফলে স্কয়ার হাসপাতাল মূলত স্কয়ার গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
এ কারণেই স্কয়ার হাসপাতাল কভিড-১৯ মহামারিতেও চিকিৎসা কার্যক্রমে এক দিনের জন্যও পিছিয়ে থাকেনি। বরং সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে সর্বোত্তম চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছে কভিড-১৯ আক্রান্তসহ সব রোগীর জন্যই। হাসপাতালের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এসাম ইবনে ইউসুফ সিদ্দিকী বার্তা সংস্থা পিপ‘র সঙ্গে আলাপে চিকিৎসা কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এক দিনের জন্যও স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। স্কয়ার হাসপাতালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও জানিয়ে দেওয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালের সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। চিকিৎসকরাও নিয়মিত চেম্বার করবেন। পরে যখন কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী বাড়তে শুরু করে তখন প্রথমে জরুরি বিভাগে কভিড-১৯ উপসর্গ যাদের আছে তাদের পৃথক করার ব্যবস্থা করা হয়, যাতে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সংক্রমিত না হন।
পরে আউটডোরে একটি পৃথক ‘ফ্লু ইউনিট’ সৃষ্টি করে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে স্কয়ারেই প্রথম স্থাপন করা হয় কভিড-১৯ শনাক্তকরণ আরটি পিসিআর ল্যাব। এরপর রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকলে গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে গড়ে তোলা হয় একটি স্বতন্ত্র কভিড-১৯ ইউনিট। এই ইউনিটটি হাসপাতালের মূল ভবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে তৈরি করা হয়েছে। ১৬তলা ভবনের এই পৃথক ইউনিটে ডাক্তার, নার্স ও সেবাদানে যুক্ত অন্যদের মিলিয়ে প্রায় ৬৫ জন কভিড-১৯ ইউনিটে দিনরাত কাজ করছেন। যারা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তাদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থাও এই ভবনেই করা হয়েছে। একটি গ্রুপ সর্বোচ্চ দশ দিন সেবা দেয়। এরপর তারা ১৫ দিনের আইসোলেশনে যায়। অন্য গ্রুপ আসে। তারা আবার দশ দিন পর আইসোলনে যাচ্ছে। এভাবে চলছে সেবাদান কার্যক্রম।
তিনি জানান, কভিড-১৯ ইউনিটে ২৬টি আইসিইউ বেডসহ মোট ৬০টি বেড আছে। আগামী সপ্তাহে আরও ৩০টি নতুন বেড স্থাপন করা হবে। এখানকার আইসিইউতে ভেন্টিলেটরসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ রয়েছে। বেসরকারি খাতের হাসপাতালে এত উন্নত ও বৃহৎ কভিড-১৯ আইসিইউ এখন স্কয়ারেই আছে বলে তিনি জানান। চিকিৎসা ব্যয় সম্পর্কে তিনি জানান, কভিড-১৯ মহামারির পর হাসপাতালের পরিচালনা ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। আগে যেখানে হাসপাতালে দিনে তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ সার্জিক্যাল মাস্ক প্রয়োজন হতো, এখন লাগছে হাজারের বেশি। আগে একট সার্জিক্যাল মাস্কের দাম পড়ত এক টাকা ৭০ পয়সা, এখন তার দাম পড়ছে ন্যূনতম ১৮ টাকা।
একইভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পিপিই গাউন ও গ্লাভসের ব্যবহার এবং দাম দুটিই বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে। তার পরও স্কয়ার হাসপাতালে যে কোনো ধরনের পরীক্ষার মূল্য, আইসিইউ বেড ভাড়া এবং ওষুধের মূল্য- কোনোটিই বাড়ানো হয়নি। বরং আরটি পিসিআর ল্যাবে কভিড-১৯ পরীক্ষার খরচ যেখানে সরকারি হিসাবেই পাঁচ হাজার টাকা পড়ে বলে জানানো হয়েছে, সেখানে সাড়ে তিন হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। অতএব স্কয়ার হাসপাতাল ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে নয়, বরং জনসেবার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এই মহামারিতে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু যথাযথ গুণগত মান নিশ্চিত করার প্রয়োজনে যতটুকু ব্যয়, সেটিই রোগীর কাছ থেকে সেবার মূল্য হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, টেলিফোনে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে স্কয়ার হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে। ০৯৬১০৬৭৮৬৭৮ এই নম্বরে ফোন করলেই পাওয়া যাবে স্কয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। কভিড-১৯ এর পাশাপাশি স্কয়ার হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।