সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মরণঘ্যাতি ভাইরাস করোনা। লকডাউন তুলে পুনরায় অঞ্চল ভিত্তিক লকডাউনের পর থেকেই ক্রমেই বাংলাদেশে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। আর সেই সূত্রের উঠে এসেছে আশঙ্কাজনক তথ্য। বিশেষত করোনায় মৃতের সংখ্যায়। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম ৬৯ দিনে মৃত্যু হয়েছিল ৫০০ মানুষের। আর পরের মাত্র ২৬ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৯০০ জনের। যার ফলে করোনায় বাংলাদেশে করোনায় মোট মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৪০০! যদিও বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় করোনায় মৃত্যুহার এখনো কম।
দেশে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪৬৪ জন। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ৩৯ জন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৮ মার্চ।
গত ২৪ ঘন্টায় দেশে প্রাণঘাতী করোনায় কেড়ে নিলো আরও ৩৯ জনের প্রাণ। যার হাত ধরে দেশে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৪৬৪ জন।নতুন শনাক্ত ৩৫৩১ জন সহ দেশে এই মুহুর্তে শনাক্ত এক লাখ ১২ হাজার ৩০৬ জন। তবে আশার কথা হলো গত ২৪ ঘন্টায় ১০৮৪ জন সহ মোট ৪৫ হাজার ১৭ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
আজ ২০ জুন শনিবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর মহাখালিস্থ স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে ৬২ টি পরীক্ষাগারের মধ্যে ৬০ টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ৭১০ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৫৮৫ টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৬ লাখ ১২ হাজার ১৬৪ টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৫৩১ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ১২ হাজার ৩০৬ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৯ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৪৬৪ জনের পাশাপাশি গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আরও ১ হাজার ৮৪ জন মোট ৪৫ হাজার ১৭ জন।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২২.৬৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আজ মৃতদের লিঙ্গ বিভাজনে পুরুষ ৩৫ নারী ৪ জন।
এদিকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের ১ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ। এতে করে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ৮৯ লাখ ২০ হাজার ৮৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রাণ গেছে আরও ৪ হাজার ৪৪৬ জনের।
এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬ জনে ঠেকেছে। আর সুস্থ হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল ছেড়েছেন সোয়া ৪৭ লাখ ৪৩ হাজারের মতো মানুষ।
এর মধ্যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ প্রায় ২২ হাজার মানুষের।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও প্রাণহানির দেশ ব্রাজিলে আক্রান্ত পৌনে ১১ লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃতের সংখ্যা অর্ধলক্ষ ছাড়িয়েছে।
আক্রান্তের তালিকায় তিনে থাকা রাশিয়ায় সংক্রমিতের সংখ্যা পৌনে ৬ লাখের বেশি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
সংক্রমণে চারে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে সংক্রমণ এখন চার লাখ ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ১২ হাজার ছুঁই ছুঁই। প্রাণহানি ঘটেছে ১৩ হাজার ২৭৭ জনের।
যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ ৩ লাখ ৩ হাজার পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ হাজার ৫৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
টানা নয়দিন মৃত্যু শূন্যের পর একদিন আগে রেকর্ড প্রাণহানির খবর জানায় স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে করে মৃতের সংখ্যা ২8 হাজার ৩২২ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত ২ লাখ প্রায় ৯৩ হাজার ১৮ জন মানুষ।
আক্রান্ত আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে। মৃত্যু হয়েছে সেখানে ৭ হাজার ৮৬১ জনের।
ইউরোপে প্রথম আঘাত হানা ইতালিতে ২ লাখ প্রায় ৩৮ হাজার ২৭৫ জন মানুষ করোনার শিকার। এর মধ্যে পৃথিবী ছেড়েছে ৩৪ হাজার ৬১০ জন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।