বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছেন যে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় বৈশ্বিক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি জীবন বিনাশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০১৪ জন।
আজ ২৯ জুন সোমবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর মহাখালিস্থ স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনের মতো অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা।
ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে ৬৮ টি পরীক্ষাগারের মধ্যে ৬৫ টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৪১৩ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৭ হাজার ৮৩৭ টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪ টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও ৪ হাজার ১৪ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪১ হাজার ৮০১ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৭৮৩ জনের পাশাপাশি গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ২০৫৩ জন মোট ৫৭ হাজার ৭৮০ জন।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২২.৫০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০.৭৫ শতাংশ, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আজ মৃতদের লিঙ্গ বিভাজনে পুরুষ ৩৬ নারী ৯ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এর আগে একইদিন বিশ্বে এ ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। করোনাভাইরাসে মাত্র সাত মাসে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা এক বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুর প্রায় সমান বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার দুপুর ১ টা পর্যন্ত বিশ্বে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৪ হাজার ৫২০ জন আর মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৯৭১ জন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মোট মৃত্যুর হার কমে এলেও যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিলের রেকর্ড সংখ্যক হারে আক্রান্ত হয়েছে। সেই সাথে শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে এশিয়ার কয়েকটি দেশে। রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী,করোনায় প্রতি ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হচ্ছে। এর মানে প্রতি ঘণ্টায় ১৯৬ জন বা প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। ১ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত গড়ের ওপর ভিত্তি করে এই হিসেব দাঁড় করানো হয়েছে।
রয়টার্সের তথ্যে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে। এই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো লকডাউন শিথিল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ফের হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। লাতিন আমেরিকায় শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা রোববার ইউরোপে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই বছর এইডস রোগে গড়ে প্রতি মাসে ৬৪ হাজার জনের আর ম্যালেরিয়া ৩৬ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে কোভিড-১৯ এ গড়ে প্রতি মাসে মৃত্যু হচ্ছে ৭৮ হাজার জনের।
এরপরও এসব পরিসংখ্যানে সম্ভবত মহামারীর পুরো চিত্রটি উঠে আসছে না বলে ধারণা বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। অনেক দেশেই প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করছেন তাঁরা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।