গতকাল বুধবার দলীয় সাংসদেরা কপি ছিঁড়ে বাজেট প্রত্যাখ্যান করার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই বাজেট করোনাকালীন সময়ের বাজেট নয়। আমরা এই বাজেট ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
বাজেট পাসের পরদিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের লন্ডনে যাওয়ারও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরীক্ষার কিটের অভাবে, হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে দেশের মানুষ মারা যাচ্ছে। আর অর্থমন্ত্রী গেলেন বিদেশে, এটা জনগণের সঙ্গে মশকরা ছাড়া আর কিছু না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরার বাসা থেকে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এই প্রতিক্রিয়া দেন।
বাজেটে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তা সর্বজনীন নয়। কর্মসূচিগুলো কিছু নির্দিষ্ট দল-গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে গৃহীত। এভাবে মূলত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় গোষ্ঠীতন্ত্র লালন করা হচ্ছে। এই বাজেট লুটপাটকারী, ধনিক শ্রেণি ও আমলাতন্ত্রনির্ভর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকে প্রস্তুত হয়েছে এবং তাঁদের স্বার্থরক্ষা করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়ার পর দলের পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসচিব আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আপত্কালীন একটা বাজেট সরকারের তৈরি করা উচিত ছিল। কিন্তু প্রোটোটাইপ ব্যুরোক্রেটিক একটা ফরম্যাটে ফেলে দিয়ে তারা এই বাজেট তৈরি করেছে। এই বাজেট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এই ঘাটতি গিয়ে ঠেকবে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকায়। ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকারের মূল পদক্ষেপ হবে ঋণ করা। বাজেটেই উল্লেখ করা হয়েছে ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যেটা শেষ পর্যন্ত দ্বিগুণ হবে। ব্যাংক থেকে এই অকল্পনীয় পরিমাণ টাকা ধার করার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ একেবারে শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। যা কর্মসংস্থানের পথ একেবারেই বন্ধ করে দেবে।
এই বাজেট কোনোমতেই বাস্তবায়নযোগ্য নয়। অর্থাৎ এত আয় তারা কোত্থেকে করবেন সেটা তারা সুনির্দিষ্টভাবে বলেনি। রাজস্ব আয় যেটা বলেছেন, এটা একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ গত বছরের সমস্ত অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, ৫০ ভাগও তারা আদায় করতে পারেনি। মহামারির কারণে অর্থনীতিতে দীর্ঘকাল যে মন্দা থাকবে, তাতে মানুষের আয় ও অভ্যন্তরীণ ভোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়ে রাজস্ব আয়ে চরম ঘাটতি তৈরি হবে।
ফখরুল বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে কম বরাদ্দ দিয়ে মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া, মোবাইল ফোন সেবার ওপর কর না কমানোয় এবং করোনাভারাইস শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ফি নির্ধারণের কড়া সমালোচনা করেন।
তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ টাকা ছাপাতে হবে। তার ফলে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি প্রচণ্ড দুর্বল হবে, যার ফল হবে মারাত্মক।
সরকার বলেছিল কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে সে একজন সরকারি রোগী। সবাইকে বিনা মূল্যে করোনা টেস্ট করা হবে। করোনা বৃদ্ধির এই মোক্ষম সময়ে সরকারি হাসপাতালে করোনা টেস্ট ফি ২০০ ও ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা টেস্ট ব্যয় জনপ্রতি ৩৫০০ টাকা, বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৪৫০০ টাকা। কি অমানবিক সরকার। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার জন্য ফি নেয় না।