এবারের বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে রূপ নিতে পারে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের উত্তরের বিভিন্ন জেলা বন্যাকবলিত। কোথাও কোথাও নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। এই অবস্থায় উজানে এবং দেশের ভেতরে আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভাবি বৃষ্টিপাত শুরু হলেও বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এমনি পরিস্থিতিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করে দেশ দীর্ঘমেয়াদে বন্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে।
হিমালয়ের বরফ গলা পানি থেকে শুরু করে, উজানে নেমে আসার পানির শতকরা ৯০ ভাগই দেশের ভেতরের প্রবাহিত নদীর মাধ্যমে সাগরে গিয়ে পড়ে। কিন্তু এই পানি চাপ যখন বেশি পরিমাণ বেড়ে যায় তখন নদী তীরবর্তী এলাকায় উপচিয়ে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এবার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই উজানের পানির কারণে নদ-নদীগুলোতে অস্বাভাবিক পানির চাপ বেড়ে যায়।
বিশেষ করে উত্তরের প্রধান নদী যমুনার পানি মধ্য জুন নাগাদই বিপদ সীমার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকেই উত্তরের জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। উত্তরের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে পড়লে বন্যার কাক্সিক্ষত কোন উন্নতি হয়নি। পানি বাড়ছে দেশের মধ্যাঞ্চলে। এই অবস্থায় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমলেও আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রধান নদ-নদী ছাড়া দেশের প্রায় সব প্রধান নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মার পানিতে প্লাবিত উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১১ জেলা। বন্যার পানি সরেনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও। এ অবস্থায় অতি ভারি বর্ষণে সেই এলাকায় পুনরায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও উত্তরাঞ্চলে অন্যত্র বন্য এখনও স্থিতিশীল রয়েছে। মধ্যাঞ্চলে পানি বেড়ে বন্যার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েক দিন ধরেই যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে।
ফলে উত্তরের বন্যার কাক্সিক্ষত কোন উন্নতি হচ্ছে না। অপর দিকে পদ্মা এবং অন্য প্রধান নদীগুলোর পানি এখনও বাড়ছেই। ফলে এসব নদীর অববাহিকায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় উজান থেকে আসা পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে এবং দেশের ভেতরে আবারও ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হলে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগেই আরেক দফায় বন্যার কবলে পড়তে পারে।
ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও আবারও বেড়ে যাবে। তখন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তারা জানায়, সাধারণ দেশে বন্যা প্রকোপ শুরু হয় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে। প্রতি বছর বন্যায় উত্তরের জেলাগুলোই বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত এসব এলাকায় মধ্য মেয়াদে বন্যার প্রবণতাই বেশি দেখা দেয়। এরপর থেকে মধ্যাঞ্চল হয়ে নিম্নাঞ্চল দিয়ে বন্যার পানি সাগরে গিয়ে পড়ে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে।
কিন্তু এবার ২ স্বাভাবিক সময়ের ২ সপ্তাহ আগেই বন্যার প্রকোপ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও বন্যার কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। এই অবস্থায় দেশের ভেতরে এবং উজানে আবারও ভারি বৃষ্টিপাত দেখা দিলে বন্যার অবনতি হয়ে দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় রূপ নিতে পারে।
এদিকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া তীব্র স্রোত বাড়ছে। ফলে এই এলাকায় নৌযান পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। পারাপারে সময় লাগছে আগের তুলনায় দ্বিগুণ। এতে করে নদী পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে বাস, প্রাইভেটকার ও পণ্যবাহী ট্রাক। নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় এ রুটে ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। বিআইডব্লিউটিসি জানায়, এই রুটে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিন-চার দিন ধরে বেড়েছে তীব্র স্রোত। ফলে আগের তুলনায় ফেরিগুলোর নদী পার হতে দ্বিগুণ সময় লাগছে। নদী পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে শত শত যানবাহন আটকে রয়েছে।
বর্তমানে যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। এই অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আপার মেঘনা অববাহিকায় সুরমা নদী ব্যতীত সব নদীর পানি কমছে। দেশের উত্তর, মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে পদ্মা যমুনা ব্রহ্মপুত্রসহ ৯টি নদীর পানি ১৬ পয়েন্টে এখন বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। অপর দিকে যমুনা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।
গত কয়েকদিন দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমলেও আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মৌসুমি বায়ু আবারও সক্রিয় হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় রংপুর ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার থেকেই উত্তরের জেলা এবং সিলেট বিভাগের ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। এদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ডিমলায় ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অপর দিকে সিলেটে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১৪৭ মিলিমিটার। তারা জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি অংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।