মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সারা দেশে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এই ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে দলটির একাধিক নেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
মারা গেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নেতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘরে বসে না থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অভুক্ত মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন। বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসাসামগ্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে যাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব অভাবী, দরিদ্র, অসহায় মানুষের তালিকা তৈরি করে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেন দলীয় নেতাদের। তিনি বলেন, প্রশাসন এই তালিকা যাচাই-বাছাই করবে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দল-মত-নির্বিশেষে যারা প্রকৃত অর্থে ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য, তারা যেন তালিকায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য বলেন তিনি। কোনো অবস্থাতেই তালিকাতে যেন কোনো দলীয়করণ না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য নেতাকর্মীদের সতর্কও করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি দ্রুত ওই তালিকা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, যত তাড়াতাড়ি তালিকা করা হবে, তত তাড়াতাড়ি গরিব মানুষকে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হবে। আমাদের ত্রাণ প্রস্তুত আছে। যত দরকার দেওয়া হবে। এই পরিস্থিতি যত দিন চলবে, যত দিন প্রয়োজন হবে, রিলিফ দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী সারা দেশে আওয়ামী লীগের ত্রাণ কার্যক্রম এখনো চলছে।
করোনাভাইরাসের কারণে মার্চের শেষ সপ্তাহে সারা দেশে লকডাউন শুরু হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কর্মহীন দরিদ্র মানুষের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করে। গত ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে সারা দেশে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে দ্রুত রিলিফ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে এই রিলিফ কমিটিকে অসহায় দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা ও সমন্বয় করার নির্দেশ দেন তিনি। গণভবন থেকে ওই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ধানমণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নেতাদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় শেখ হাসিনা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিষয়টি জেলা নেতাদের জানিয়ে দেওয়ার জন্যও বলেন।
এর পর সারা দেশে কমিটি গঠন করে আওয়ামী লীগ। শুরু হয় ব্যাপক ভিত্তিতে ত্রাণ কার্যক্রম। বিষয়টি গণভবন থেকে সরাসরি মনিটর করেন প্রধানমন্ত্রী।
ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, দলীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা দলের পক্ষে সারা দেশে এক কোটি ২৫ লাখ আট হাজার ৮১ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা করেছে। পাশাপাশি একই সময় ১০ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পিপিই, চশমা, মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস, ফিনাইল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ব্লিচিং পাউডার, স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা এই দুর্যোগে মানুষের পাশে রয়েছেন।
জননেত্রী ত্রাণ কার্যক্রম নিজে মনিটর করছেন। ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বিএনপি জনগণের পাশে নেই। এ সংকট পুঁজি করে তারা বিভেদের রাজনীতি করছে।
দুর্যোগকালীন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রংপুর বিভাগে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৮ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। এ সময় রংপুর বিভাগে দুস্থ মানুষের মাঝে ৫৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। রাজশাহী বিভাগে খাদ্য সহায়তাপ্রাপ্ত পরিবারের সংখ্যা ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ এবং নগদ অর্থ বিতরণ করা হয় এক কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকা।
খুলনা বিভাগে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৬৭ পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়। আর এক কোটি ২২ লাখ ২৬ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়। বরিশাল বিভাগে সাত লাখ ৩২ হাজার ৫৫৬ পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়। সহায়তা দেওয়া হয় এক কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ঢাকা বিভাগে ৪১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৮ পরিবারকে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এই বিভাগে চার কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজার টাকা অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করে আওয়ামী লীগ। ময়মনসিংহ বিভাগে চার লাখ ২৬ হাজার ১২৫ পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ এবং ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। সিলেট বিভাগে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৭৮৭ পরিবারের মধ্যে খাদ্য বিতরণ এবং ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ লাখ ৯২ হাজার ৪১০ পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ এবং এক কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়।
দুর্যোগের সময়ে শ্রমিকের অভাব দেখা দিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ইফতারি-সাহরি ও বিনা মূল্যে সবজি বিতরণ এবং টেলিমেডিসিন, ফ্রি অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস, লাশ দাফনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মকবুল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য কামরুন্নাহার পুতুল, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান, বগুড়ার ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসীন আলম, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রওশন আলী প্রমুখ।