বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত পেওনিয়ার প্রিপেইড মাস্টারকার্ড বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পেওনিয়ার কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্লগের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বিষয়টি জানিয়েছে।
অনলাইনে কাজ বা ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে পেওনিয়ার বেশ জনপ্রিয়। এর মাধ্যমে কাজের অর্থ পরিশোধ করে থাকে বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। যেমন- ফ্রিল্যান্সার ডটকম, ফাইভার, আপওয়ার্ক, ৯৯ ডিজাইন, গেটিইমেজেস, ইনভাটো, পিপল পার আওয়ার, টপকোডারসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস।
পেওনিয়ারের এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়েছে, এখন প্রিপেইড কার্ড ব্যবহারকারীরা সাময়িকভাবে অর্থ উত্তোলন বা নতুন কোনও পেমেন্ট নিতে পারবেন না। তবে পেওনিয়ারের কাছে থাকা অধিকাংশ অর্থের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না। পেওনিয়ার এ বিষয়ে অন্যান্য অপশন অন্তর্ভুক্তির জন্য কাজ করছে। আপাতত সব কার্ডকে ‘ফ্রিজ’ করে রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
যুক্তরাজ্যের ওয়্যারকার্ড সল্যুশন লিমিটেডকে দেশটির ফাইন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি (এফসিএ) সব ধরনের আর্থিক কর্মকাণ্ড বন্ধসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ দেওয়ার পরই সমস্যার শুরু হয়। ওয়্যারকার্ড ইউকে থেকেই পেওনিয়ার প্রিপেইড মাস্টারকার্ড ব্যবহারকারীদের কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওয়্যারকার্ড এজির শাখা হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানটি গত ২৫ জুন ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জে নিজেদের দেউলিয়া দেখিয়ে আবেদন করে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২০০ কোটি ডলার কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী মার্কার ব্রাউন গ্রেফতার হয়েছেন।
পেওনিয়ার প্রিপেইড কার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশ-বিদেশের ব্যবহারকারীরা বেকায়দায় পড়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের অনেক অনলাইন ফ্রিল্যান্সার। কারণ, বাংলাদেশের তারা কাজের অর্থ পেওনিয়ারের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। এখন লেনদেন বন্ধ হওয়ায় অনেকেই অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে চলছে নানান আলোচনা।
তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বাংলাদেশের সফটওয়্যার প্রকৌশলী হাসিন হায়দার বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘পেওনিয়ারের ইস্যুটা সত্যিই দুঃখজনক। দেশের লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সারের জন্য বাইরের সাবস্ক্রিপশন, কোর্স, হোস্টিং ফি, অ্যাড ফি, অনলাইন কেনাকাটা করার জন্য এটাই প্রাইমারি বা একমাত্র মাধ্যম। কতোগুলো মানুষ একরাতের মধ্যে কী বিশাল একটা ঝামেলায় পড়লো! টাকা আটকে থাকার চেয়ে বেশি কষ্টের বিষয় এটাই।’
অনেকেই এই কার্ড ব্যবহার করে সার্ভার, হোস্টিংসহ নানান সাবস্ক্রিপশন নিয়ে থাকেন। তাদের জন্য বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী হাসিন হায়দার। আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘পেওনিয়ারের ইস্যুটা আশঙ্কাজনক। প্রথমে যে কাজটা আপাতত করতেই হবে তা হলো- যত সাবস্ক্রিপশন কেনা আছে সেগুলো নবায়নের তারিখ দেখা এবং সেগুলোর জন্য ব্যাকআপ পেমেন্ট পদ্ধতি যুক্ত করা। কারণ সাবস্ক্রিপশনের সময় লেনদেন যদি বাউন্স করে তাহলে দ্রুত সাবস্ক্রিপশন বন্ধ হয়ে যাবে।’
যারা গান-বাজনার সাবস্ক্রিপশন কিনে রেখেছেন তাদের ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা হবে না। কিন্তু হোস্টিং/সার্ভার সম্পর্কিতগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সফটওয়্যার প্রকৌশলীর পরামর্শ, এরপরে যেটা করতে হবে- যদি ব্যাকআপ পেমেন্ট পদ্ধতি যুক্ত করতে পারেন বা নাও পারেন, এখনই আপনার হোস্টিং/সাইটের ফুল ব্যাকআপ নিয়ে নিন। এতে করে হোস্টিং বাতিল হয়ে গেলেও অন্তত পরে রিস্টোর করতে পারবেন। এটা খুবই জরুরি। টাকা গেলে টাকা আবারও আসবে। কিন্তু তথ্যাদি হারিয়ে গেলে সেটা আর পাবেন না।’
যেসব ফ্রিল্যান্সারদের টাকা আটকে গেছে তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে ফেসবুকে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন। শফিক আসাদ নামের একজন লিখেছেন, ‘এত মাসের পরিশ্রম, ব্যবসার আয়, চাকরির বেতন সব আটকে গেলো। এখন কীভাবে কী হবে, কবে হবে কিচ্ছু জানি না। গত দশ বছরে কখনও এতটা অসহায় লাগেনি। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে এমনিতেই করুণ অবস্থায় আছি, এখন মনে হচ্ছে কফিনে শেষ পেরেকটাও গেঁথে গেলো।’