বাঙলাদেশে জামায়তে ইসলামীর রাজনীতির একটা বড় অংশ হচ্ছে নিখাদ প্রচারণা। মিথ্যা, অর্ধসত্য ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের পক্ষে আনা।
সবচেয়ে বেশী যে বিষয়টি নিয়ে তারা অবলীলায় মিথ্যাচার করে তা হলো তাদের নেতাদের শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা। বিষয়টি যদিও পরিষ্কার নয়, ক্যাননা রাজনীতি করতে হলে রসায়ন শাস্ত্রে সুপন্ডিত হওয়া আবশ্যক নয়, মানুষের কাছে পৌছাতে পারাটাই জরুরী। বেগম খালেদা জিয়া এসএসসি ফেল, কিন্তু ৩ বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের হাল ধরেছেন।
জামাত যদিও সবসময় পড়াশোনায় ভালো, ভদ্র হিসেবে সুনাম আছে এমন ছেলেদের দলে টানতে চায়, হতে পারে তার জন্যই নিজেদের নেতাদের মিথ্যা গরিমা দিয়ে উপস্থাপন করার এই নিপুণ প্রচেষ্টা। উদাহরণ সরুপ শীর্ষ ত্রিরত্নের কথাই ধরা যাক-
১. “অধ্যাপক” গোলাম আযমঃ জামায়তের মূল তাত্ত্বিক, ১৯৬০-২০০০ মোট ৪০ বছর যাবৎ জামাতের সভাপতি ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিদ্যায় একজন সাধারণ স্নাতকোত্তীর্ণ জামাতের এই ‘গুরুর’ ইসলামী বিদ্যায় কোন প্রাতিষ্ঠানিক সনদ নেই।
“অধ্যাপক” অনেক বড় একটা পদ, বিশেষত সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তার জন্য কয়েক দশকের মেধা, শ্রম ও প্রতিভা প্রয়োজন। গোলাম আযম রঙপুর কারমাইকেল মহাবিদ্যালয়ে তাঁর কর্মজীবনে সহকারী অধ্যাপক পর্যন্তই পৌছোতে পেরেছিলেন। শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত যে কেউই বুঝবেন যে সহকারী ও পূর্নাঙ্গ অধ্যাপক “একই বিষয়” নয়।
২. “মাওলানা” মতিউর রহমান নিজামীঃ ২০০০-২০১৬ মোট ১৬ বছর জামাতের সভাপতি ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে কামিল উত্তীর্ণ, জীবনেও কখনো “মাওলানা” ছিলেন না, জামাতের কর্মী ও অনুসারীদের প্রচারণা বাদ দিলে। এটুকু মনে রাখা জরুরী যে ‘মাওলানা” কোন দলীয় পদ নয়, ইসলামী বিদ্যায় একটি বিশেষ সনদ।
৩. আল্লামা দেলোয়ার হোসেন “সাঈদী” ঃ বিশ্ববিখ্যাত “ইসলামী তত্ত্ববিদ” আর জামাতের সহসভাপতি। আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করেছেন। রাজনীতির আগে তিনি পিরোজপুরের ইন্দুরকানি অঞ্চলে পারেরহাট গ্রাম্য বাজারে একজন সাধারণ দোকানদার ছিলেন। এই “বিশ্বখ্যাত জ্ঞানী”টিও কখনো মাওলানা ছিলেন না। উপরন্তু “সাঈদী” নামটিও ভূয়া। তাঁর আসল নাম দেলোয়ার শিকদার, পিতার নাম ইউসুফ শিকদার।
আশির দশকে তিনি আশেপাশের গ্রাম্য ওয়াজ মাহফিলগুলোতে নসিহত করা শুরু করেন। পরবর্তীতে জামাতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে “ইসলাম বিশেষজ্ঞ” হিসেবে আত্নপ্রকাশ ঘটান। সাউদখালি গ্রাম থেকে এসেছেন বলে “সাঈদী” হিসেবে নিজের নাম ভাঁড়ান। তাঁর বিশ্ববরেণ্য ভাবমূর্তিটিও পুরোপুরি সঠিক নয়, মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যের প্রবাসী ও অভিবাসী বাঙলাদেশীরাই তার ‘বৈদেশীক’ শ্রোতা ও ভক্ত।