উদ্বৃত্ত মূল্য বা Mehrwert হলো এই অতিসরলীকৃত তত্ত্ব যে উৎপাদনই পন্যের মুল্য নির্ধারণ করে, অর্থাৎ বানিজ্যিক স্বার্থে একত্রিতকৃত ভূমি মূলধন ও সংগঠনের যে মূল্য, তার সাথে বাজারে বিক্রিত তৈরী পণ্যের দামের যে প্রভেদ তা নির্ধারণ করে একটা মাত্র শর্ত, শ্রমিকের মেহনত।
মাটির ভাষায় ১০০ টাকায় কেনা একটা মুরগীর ৮ খন্ড করে প্রতিটা খন্ড যখন ৪০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়, সেখানে ২২০ টাকা লাভ হয়, কারণ ওটাকে রান্না করে পরিবেশন করা হয়েছে, অর্থাৎ শ্রম। কিন্তু বাবুর্চি কি মুরগী প্রতি ওই ২২০ টাকা পায়? নাহ, সেটা সোজা চলে যায় মালিকের ট্যাঁকে, অর্থাৎ সৃষ্টি হয় পূঁজির।
এখন ঘরে অভাব আর মনেতে আবেগ থাকলে এহেন যুক্তি শুনতে শুধু ঠিকঠাকই না, রীতিমতো চমকপ্রদ মনে হয়। কিন্তু এর ভিত্তি কতোটা দৃঢ়? একটা ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে পর্যালোচনা করা যাক।
রোকন আমাদের পাড়ায় একটা কাপড়ের দোকান চালায়। ৪জন দর্জির এই দোকানে একটা টিশার্টের দাম ৫০০ থেকে ৭০০টাকা পর্যন্ত। ধরা যাক একক প্রতি সেখানে কাপড় ও সূতার মূল্য ছিলো ৩০০টাকা, দোকান পরিচালনা ব্যয় ১০০টাকা; অর্থাৎ একক প্রতি মুনাফা ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
এবার দেখা যাক কি হয় যখন বাংলাদেশের বেক্সিমকো আমেরিকার ওয়ালমার্টের সাথে বানিজ্য করে। একক প্রতি কাপড়ের দাম ৩০০, পরিচালনা ব্যয় ১৫০, নিউইয়র্কে প্রতি খানা কাপড়ের দাম ৬০০-১১০০টাকা, অর্থাৎ একক প্রতি লাভ ১৫০-৬৫০টাকা। কিন্তু এটাই সবকথা নয়, ধরা যাক ওয়ালমার্ট প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৯০কোটি টাকার পণ্য কেনে। সেখানে রোকনের সারা বছরের আয় ৩০ লক্ষ হবে কিনা সন্দেহ।
কে পুঁজি সৃষ্টি করছে এখানে? শ্রমিকের মেহেনত? তাতো দুটি প্রতিষ্ঠানেই এক, একক প্রতি উৎপাদন খরচও প্রায় সমান, তাহলে ৩০ লক্ষ আর ৯০ কোটির যে বিস্তর ফারাক৷ তা তৈরী হলো কিভাবে? উত্তরটা হলো ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞাপন ও বাজারজাতকরণ, অর্থাৎ “সংগঠন”।
এবার বলুন মার্ক্সবাদী অর্থনৈতিক তত্ত্বের সংগে আজকের পূঁজির মিল কোথায়? নূতন শ্লোগান কি হওয়া উচিৎ? দুনিয়ার ম্যানেজারস এক হও!!