নির্যাতন ও ক্ষোভ থেকেই ঘুমন্ত স্বামীকে চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে স্ত্রী বিউটি বেগম (৪০)। বৃহস্পতিবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বামী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন বিউটি বেগম। শুক্রবার বিকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন এ তথ্য জানান।
ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। খবর পেয়ে গাজীপুর পিবিআইয়ের ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে। পর দিন নিহতের স্ত্রী বিউটি বেগমকে (৪০) বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর বিউটি বেগম গাজীপুর আদালতে আদালতে ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
গত ৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টংগী পূর্ব থানার হিমারদীঘির দত্তপাড়ার আ. কুদ্দুসের বাড়ির ভাড়াটিয়া সাইফুল ইসলামের (৫০) গলা কেটে করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা বিউটি বেগম জানান, তিনি টঙ্গীর কোকাকোলা কারখানায় চাকরি করতেন। স্বামী সাইফুল ইসলাম টঙ্গী এলাকায় রাস্তায় রাস্তায় পান সিগারেট বিক্রি করতেন। স্বামী মানসিকভাবে একটু অসুস্থ ছিল। গত দুই-আড়াই বছর ধরে তিনি বিউটির চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করতেন। পর পুরুষকে জড়িয়ে তার সম্পর্কে খারাপ কথা বলতেন। ঠিকমত ভরপোষণ করতেন না।
৮ জুলাই সকালে বিউটি বেগম ঘুম থেকে উঠে ভাত রান্না করে তার স্বামী সন্তানদের খাইয়ে কারখানায় কাজে যান। কিছুক্ষণ পর অসুস্থ বোধ করায় সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে ছুটি নিয়ে বাসায় এসে দেখে তার সাইফুল খাটে ঘুমাচ্ছেন। তাকে দেখে স্বামী জিজ্ঞেস করেন, ‘চলে আসলি কেন’? তিনি অসুস্থতার কথা জানান। এক পর্যায়ে বিউটি বেগম ওড়না বিছিয়ে ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়েন।
কিছুক্ষণ পর সাইফুল ঘরের দরজা লাগিয়ে তার কাছে এসে তার শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়। এরপর বলে, ‘তোর চুল ভেজা কেন? কয়জন পুরুষের সঙ্গে আকাম করে আসছিস? এ বলে তার গলায় নখ দিয়ে খামচি দেয়, দুহাতে গলা চেপে ধরে। বিউটি বেগম তার হাত থেকে ছুটার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে বিউটি বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
জ্ঞান ফিরে পেলে দেখেন সাইফুল তার পাশে মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে। তখন তার খুব রাগ হয় এবং দীর্ঘদিনের শরীরিক ও মানসিক নির্যাতনের জন্য সৃষ্ট ক্ষোভে সকাল ১০টার দিকে ঘরে থাকা তরকারি কাটার ধারাল চাকু দিয়ে বিউটি বেগম ঘুমন্ত স্বামীকে গলা কেটে হত্যা করেন। মামলাটি তদন্তাধীন।