প্রয়াত হয়েছেন ভারতের বিখ্যাত ব্যান্ডদল ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রঞ্জন ঘোষাল। মৃত্যুর পরও তাকে নিয়ে সমালোচনা থামেনি। কারণ রঞ্জন ঘোষালের বিরুদ্ধে গত বছর সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন ভারতীয় এক তরুণী। সুস্মিতা প্রামাণিক নামের যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে রঞ্জন ঘোষালের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে ইনবক্সে বিভিন্নভাবে যৌন উস্কানিমূলক কথাবার্তার বিষয়ে ছবিসহ পোস্ট দেন তরুণীটি। এবার এই বিষয়ে মুখ খুললেন বিখ্যাত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
দুই বাংলার বিখ্যাত পুরুষ-শিল্পীসাহিত্যিকদের মধ্যে অনেকেরই অনুমতি না নিয়ে মেয়েদের শরীরের আনাচ কানাচ স্পর্শ করার অভ্যেস আছে। মেয়ে দেখলেই যৌন রসাত্মক কথা বলার ইচ্ছেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মহীনের ঘোড়াগুলির রঞ্জন ঘোষালের বিরুদ্ধে কিছু মেয়ের অভিযোগ ছিল। রঞ্জন ঘোষাল নিজের ভুল স্বীকার করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন, আর কখনও এমন ভুল হবে না বলে কথা দিয়েছেন। তাঁর ফেসবুকের টাইমলাইনে এটিই তাঁর শেষ পোস্ট। এই অভিযোগের কারণে তিনি অনেক কিছুই হারিয়েছেন, তাঁর প্রিয় ফেসবুক, সম্ভবত প্রিয় স্ত্রী সন্তানের সাহচর্যও। গত এক বছর তিনি তাঁর ভার্চুয়াল প্রমোদের প্রায়শ্চিত্য চরম ভাবেই করেছেন।’
কিন্তু অন্যরা? মেয়েরা যৌন হেনস্থার অভিযোগ করলে তাঁরা স্বীকারই করেননি, ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা। দুজনের উদাহরণ দিচ্ছি। বাংলাদেশের সৈয়দ শামসুল হকের যৌন হেনস্থা নিয়ে মেয়েরা ভয়ে মুখ খোলে না, পশ্চিমবঙ্গের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যৌন হেনস্থা নিয়েও মেয়েরা ভয়ে মুখ খোলে না। ভয়টা মূলত এঁদের পুরুষতান্ত্রিক ফ্যানদের নিয়ে। ফ্যান থেকেই কিন্তু ফ্যানাটিক শব্দটা এসেছে। ফ্যানাটিকরা খুন পর্যন্ত করতে পারে। কোনও মেয়ে যখনই ওঁদের বদ চরিত্র ফাঁস করেছে, অমনি সেই মেয়েকে অপমান অপদস্থ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সহস্র সশস্ত্র ফ্যানাটিক।’
‘তাই বলি, এই বাঙালি পুরুষ-শিল্পীসাহিত্যিকদের মধ্যে রঞ্জন ঘোষালই আলাদা। তিনি মাথা নত করতে পারেন। অনুতপ্ত হতে পারেন। করজোড়ে ক্ষমা ভিক্ষে করতে পারেন। রঞ্জন ঘোষালের কাছে বাংলার পুরুষদের অনেক শেখার আছে।’