১১জুলাই। মীরসরাই ট্রাজেডি দিবস। দেখতে দেখতে পার হলো নয়টি বছর। স্বজনের বুকফাটা আহজারীতে এখনো ভারী হয় আবুতোরাবের আকাশ বাতাস। চোখের জল শুকিয়ে শোকে পাথর। এখনো গভীর রাতে ভেসে আসে কান্নার রোল। স্মৃতি বলতে শুধুই ছবির ফ্রেম। নাড়ী ছেঁড়া ধন ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা সেই ছবি বুকে আকড়ে ধরে আহজারী করেন। কখনো কখনো হয়ে যান নির্বাক।
বৈশ্বিক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি মহামারি করোনা ভাইরাসে এই সংকটময় সময়ে এবারের “মীরসরাই ট্র্যাজেডি দিবস” পালিত হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে। যদিও বিগত বছরগুলোতে নানা আয়োজনে ব্যাপক সমাগমে পালিত হতো এ দিনটি।
গতকাল ১১ জুলাই শনিবার সকাল থেকে আবুতোরাব স্কুল মসজিদে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মাওঃ রবিউল হোসেন নিজামীর তত্ত্বাবধানে কোরানখানি ও মিলাদ,আবুতোরাব জগন্নাথ ধামে বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবু মিহির চক্রবর্ত্তীর তত্ত্বাবধানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ প্রার্থনা,মায়ানী বড়ুয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রীমৎ শাসন বংশ মহাথের(সমীরণ বড়ুয়া) এর তত্ত্বাবধানে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রার্থনা সম্পন্ন হয়।
সকাল ১১ টায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত আবেগ ও অন্তীম এর পাদদেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন,মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর পক্ষে তাঁর জৈষ্ঠ পুত্র সাবেদ উর রহমান সুমু, উপজেলা পরিষদের পক্ষে মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির নিজামী, আবুতোরাব স্কুলের পক্ষে পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ,সদস্য মোহাম্মদ হাসান, নুর উদ্দিন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার, শিক্ষক জামাল হোসেন, নিহত শিক্ষার্থীদের অবিভাবকদের পক্ষে নিজাম উদ্দিন, আবুল হোসেন বাবুল,আরিফ মাঈনুদ্দিন,সাইফুল প্রমূখ।
এসময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে সাবেক মন্ত্রীপুত্র সাবেদ উর রহমান সুমু বলেন, মীরসরাই ট্র্যাজেডি একটি দুঃসহ কান্নার নাম। আজও ৪৫ পরিবারের স্বজনহারাদের শোকের কান্না শেষ হয়নি। তাদের প্রতি আমরা সকলেই সমবেদনা জানাই। আরো সহস্র বছর ধরে এই শিশুরা মানুষের মনে গেঁথে রইবে ইতিহাস হয়ে। আমাদের সকলের কামনা, এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর কোনদিন না ঘটে এ পৃথিবীর বুকে।
এসময় আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ এর সদস্য, সাংবাদিক ও কলামিস্ট মোহাম্মদ হাসান বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে বহু বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা-সংগঠন। কিন্ত সংশ্লিষ্ট মহল কিংবা সরকার আজও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকারের এখনই সময় নিরাপদ সড়ক তৈরিতে সার্ভে, ফিটনেসবিহীন সড়কযান ও অনভিজ্ঞ চালক দিয়ে গাড়ি চালনা বন্ধ এবং সঠিক নীতিমালা প্রণনয়ন করা।
আমরা এমন দুর্ঘটনা আর দেখতে চাই না। দেখতে চাই না পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া রাজিবের মতো অবুঝ শিশুর জীবন অকালে ঝরে যাক। চাই নিরাপদ সড়ক। চাই স্বচ্ছ একটি নীতিমালা। বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন একটি নিয়মতান্ত্রিক আইন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে জরিমানা শুধু নয়, ঘটনাস্থলেই বিচার বাস্তবায়ন হবে। এতে কিছুটা হলেও সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। বাস্তবসম্মত আইন প্রণয়ন, আইনের সঠিক বাস্তবায়ন এবং সচেতনতাই আনতে পারে মুক্তি।
সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হতে হবে, হতে হবে দায়িত্ববান মানুষ।