কুমিল্লা নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালের এনআইসিইউতে নবজাতককে ভর্তি করে উধাও হয়ে গেছেন বাবা। লক্ষাধিক টাকা বিল পরিশোধের সামর্থ্য না থাকায় এ হাসপাতালে নবজাতক কন্যা সন্তানকে দেখতে আসেননি শিশুটির বাবা-মা ও স্বজনদের কেউ।
অভিভাবকহীন এ শিশুটিকে নিয়ে বিপাকে পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে নজরে আসে পুলিশ সুপারের।
গত ৫ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী শিরীন আক্তার দুটি জমজ সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর একটি শিশু মারা যায় এবং অপর মেয়ে শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নজরে আসে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের। শিশুটির সার্বিক ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন তিনি।
ওই পরিবারটির ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় নগরীর ঝাউতলা এলাকার কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করেন। ভর্তির পর থেকে উধাও নবজাতকের বাবা। হাসপাতালে ভর্তির সময় শিশুটির বাবা মিজানুর রহমান যে ফোন নম্বর দিয়েছিলেন ওই নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এমন খবর পেয়ে রবিবার দুপুরে হাসপাতালে ছুটে আসেন শিশুটির বাবা-মা। গত ৭ দিনে এ শিশুর চিকিৎসা বাবদ খরচ আসে ১ লাখ ৩০ হাজার ১০৭ টাকা।
শিশুটির বাবা মিজানুর রহমান জানান, ‘আমার টাকা দেয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না, তাই ফোন রিসিভ করিনি এবং হাসপাতালে আসিনি। ’
পেটের সন্তান ভর্তির পর টাকার জন্য হাসপাতালে আসতে পারছি না, এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে। এ কারণে আমার স্বামী হাসপাতালে আসতে পারেননি। আমার অসুস্থতা সত্ত্বেও হাসপাতালের বিল পরিশোধের জন্য অনেকের কাছে টাকার জন্য ছুটে গিয়েছি। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি, আমাদের পাশে কেউ এসে দাঁড়ায়নি। মেয়ের জন্য আমার মন কাঁদলেও তাকে দেখতে হাসপাতালে আসতে পারিনি। আমরা একেবারেই নিরুপায় হয়ে পড়েছিলাম। এসপি স্যার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমরা স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। ’
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. এমরান জানান, ‘এটি প্রি-ম্যাচিউর শিশু। ভর্তির সময় তার ওজন ছিল সাড়ে ৭০০ গ্রাম। অন্য শিশুকে যে ধরনের সাপোর্ট দিয়ে থাকি, এর ক্ষেত্রেও আমরা একই ধরনের সাপোর্ট দিয়েছি। বর্তমানে শিশুটি উন্নতির দিকে রয়েছে।
এখানে ৭ দিনে যে বিল এসেছে, হতদরিদ্র দম্পতির এ বিল পরিশোধের সামর্থ্য নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পেয়েছি। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে শিশুটি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত আমরা চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। ’