ঈদে মহাসড়কে চাঁদাবাজি রোধে মাঠে নামছে হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা দল। আগামী সপ্তাহেই তারা কাজ শুরু করছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও মাঠে থাকছে। এদের সঙ্গে থাকছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও। গোয়েন্দা সদস্যদের প্রধান টার্গেট কোরবানি পশুবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি হয় কিনা, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ামাত্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে। এক্ষেত্রে কে পুলিশ, কে র্যাব বা অন্যকোন বাহিনীর সদস্য তা দেখা হবে না। প্রয়োজনে দোষীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করা হবে। পশু ও পণ্যবাহী যানবাহনে মাদক বা বিস্ফোরকের মতো কোন ক্ষতিকর জিনিস আসছে কিনা তাও নজরদারির মধ্যে থাকছে।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জুন মাসের শুরু থেকেই এমন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। পরিবহন সেক্টর ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি ঠেকাতে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ৪ জুন পুলিশ সদর দফতরে একটি বিশেষ বৈঠক করা হয়। পুলিশ প্রধানে নেতৃত্বে সেই বৈঠকে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের এমপি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ শাজাহান খান, হাইওয়ে পুলিশের প্রধানসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং পরিবহন সেক্টরের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে মহাসড়কে চাঁদাবাজি হবে না, নসিমন করিমন চলবে না, অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলবে না বলে একমত হন সবাই।
পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে কড়া নির্দেশনা জারি করেন। তারই ধারাবাহিক সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে নানা অজুহাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ১০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ৫১টি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয় পুলিশের তরফ থেকে। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, মহাসড়কে অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলতে দেয়া হবে না। মহাসড়কে চলতে দেয়া হবে না নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ এ জাতীয় যানবাহন। পুলিশ প্রধানের নির্দেশনা মোতাবেক সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি শূূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এজন্য পুলিশের সব ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ চলছে। গত বছরের মতো মহাসড়কে চাঁদাবাজি নিয়ে আর যেন কোন চাঞ্চল্যকর ঘটনা না ঘটে এজন্য আগ থেকেই তারা সতর্কতা অবলম্বন করেছেন।
গত বছরের ১৬ মে নাটোরের বনপাড়া হাইওয়ে এলাকায় ঈদ বকশিশ হিসেবে ২০ হাজার টাকা না পেয়ে হাইওয়ে পুলিশের কতিপয় সদস্য ক্ষোভে ৩৫ হাজার ডিম নষ্ট করে দেয়। এমন ঘটনার পর ডিমের মালিক বিপ্লব কুমার সাহা (৩৫) বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার হাটিমকুমরুল মহাসড়কের আগ্রান সুতিরপাড় এলাকায় পিকআপে করে ডিম দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। রাস্তায় পিক আপ নষ্ট হয়। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের কয়েক সদস্য তাদের কাছে পিকআপ সরানোর জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করে। অন্যথায় কঠিন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় পিকআপের রশি কেঁটে দেয়। এতে পিকআপে থাকা পৌঁনে তিন লাখ টাকার ৩৫ হাজার ডিম রাস্তায় পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতে তার পথে বসার উপক্রম হয়।
এ ঘটনার তদন্ত হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত হাইওয়ে পুলিশের ছয় সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লোজ করা হয়। তাদের হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়ন সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। ঘটনাটি ব্যাপক সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
মহাড়কে চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। এজন্যই হাইওয়ে পুলিশের তরফ থেকে বিশেষ গোয়েন্দা দল গঠন করা হয়েছে। তাদের ছদ্মবেশে দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পাঠানো হবে। তাদের অনেকেই গরুর পাইকার, ক্রেতা, সাধারণ যাত্রীসহ নানা বেশে মহাসড়কে যাতায়াত করবেন। রাস্তার কোথায় চাঁদাবাজি হয়, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য সরবরাহ করবে। চাঁদাবাজদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা হবে। কোরবানির ঈদে পশুবাহী যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে সাধারণত বেশি চাঁদাবাজির ঘটনাটি ঘটে থাকে। এজন্য এই দুই ধরনের যানবাহনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে।
দেশের সব মহাসড়কের তাদের গোয়েন্দা দলের সদস্যরা আগামী সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু করবেন। চাঁদাবাজিতে যেই জড়িত থাকা, তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। সে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, পরিবহন সেক্টর, পরিবহন মালিক সমিতি বা শ্রমিক সমিতির বা স্থানীয় কোন ক্লাব বা সংগঠনের সদস্য হউক না কেন, কাউকেই ছাড়া হবে না। সরাসরি গ্রেফতার করা হবে।
প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের সাজা নিশ্চিত করা হবে। দেশের প্রতিটি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টেই গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করবেন। সরকারের উচ্চপর্যায় ছাড়াও পুলিশ মহাপরিদর্শকের তরফ থেকে এমন নির্দেশনাই এসেছে। এক্ষেত্রে কোন দলের নেতাকর্মীদেরও দেখা হবে না। পাশাপাশি কোরবানি পশু ও পণ্যবাহী যানবাহনে মাদক বা বিস্ফোরক আসছে কিনা সে বিষয়ে নজর রাখা হবে। এক্ষেত্রে র্যাব, জেলা পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সঙ্গে তাদের সমন্বয় আছে।