বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও সম্পদশালী মন্দির হিসেবে পরিচিত কেরালার পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের কর্তৃত্ব ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ত্রিবাঙ্কুরের রাজপরিবারের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালে কেরালা হাইকোর্টের এক রায়ে এই মন্দিরের নিয়ন্ত্রণ রাজ্য সরকারের গঠিত এক ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। খবর বিবিসি বাংলার
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা এখন খারিজ করে দিয়েছে, কেরালার বর্তমান কমিউনিস্ট সরকার সেই রায় মেনেও নিয়েছে।
ওই মন্দিরের যে কয়েকটি ভল্ট এখনও পর্যন্ত খোলা হয়েছে, তাতেই প্রায় এক লক্ষ কোটি রুপির ধনসম্পদের হদিশ মিলেছে।
বস্তুত দক্ষিণ ভারতের কেরালায় হিন্দুদের এমন বেশ কয়েকটি মন্দির আছে, যেগুলোর পাহাড়প্রমাণ ধনসম্পদ নিয়ে অনেক জনশ্রুতি প্রচলিত।
কিন্তু এগুলোর মধ্যেও নি:সন্দেহে সবার আগে তিরুবনন্তপুরমের পদ্মনাভস্বামী মন্দির – যে প্রাচীন মন্দিরটিকে অনেকেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ধর্মীয় উপাসনালয় বলে বর্ণনা করে থাকেন।
দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতিরাও নিয়মিতই এই মন্দির দর্শন করে থাকেন, কোটি কোটি মানুষ এই মন্দিরের ভক্ত এবং রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই মন্দির।
পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদও অনেক পুরনো। কেরালা হাইকোর্টের রায়ে সেই নিয়ন্ত্রণ এমন এক সরকারি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে সব ধর্মের মানুষরাই থাকতে পারতেন।
কিন্তু সেই রায়ের নবছরের মাথায় সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ মন্দিরের সেবাইতের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারের বংশধরদের।
সাংবাদিক সর্বপ্রিয়া সাঙ্গওয়ান বলেন, ভারতের স্বাধীনতার পর যখন রাজন্যশাসিত কোচিন ও ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের সংযুক্তি ঘটে তখনকার চুক্তি অনুসারে এই মন্দিরের নিয়ন্ত্রণ যায় ত্রিবাঙ্কুরের রাজপরিবারের হাতে।
২০০৭ সালে ত্রিবাঙ্কুরের শেষ রাজার ভাই মন্দিরের ধনসম্পত্তির ওপর দাবি জানানোর পরই এনিয়ে মামলা মোকদ্দমার শুরু। মন্দিরে মোট ছটি ভল্ট আছে – এ থেকে এফ।
শেষ দুটো ভল্টে থাকে পুজোর বাসনপত্র, সি আর ডি-তে থাকে বিশেষ দিনে বিগ্রহকে সাজানোর অলঙ্কার।
আদালতের নির্দেশে বছরদশেক আগে যখন বি ভল্ট খোলা হয়, তখন তাতেই এক লক্ষ কোটি রুপির সোনাদানা হিরেজহরত মিলেছিল, পাওয়া গিয়েছিল হীরকখচিত সাড়ে তিন ফুট উঁচু বিষ্ণুমূর্তি।
তিনি বলেন, কিন্তু এ ভল্টেই মন্দিরের সবচেয়ে বেশি ধনরত্ন আছে বলে বলা হয় – যেটা আজ পর্যন্ত খোলাই হয়নি।
এরকম একটা সম্পদশালী মন্দিরের কর্তৃত্ব একটি হিন্দু রাজপরিবার ফিরে পাওয়ায় স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত হিন্দু ধর্মের নেতৃস্থানীয়রা।
অন্ধ্রের চিলকুর বালাজি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ড: এম রঙ্গরাজনের কথায়, জাস্টিস ইন্দু মালহোত্রা ও সুপ্রিম কোর্টে তার সহ-বিচারপতিরা আসলেই কেরালার অনন্ত পদ্মনাভস্বামী মন্দির নিয়ে একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন।
একটি ধর্মীয় উপাসনালয়ের ওপর আসল অধিকার যে তার ভক্তদের এবং শত শত বছর ধরে চলে আসা পরম্পরার, তারা সেটারই স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কেরালার রক্ষণশীল অ্যাক্টিভিস্ট রাহুল ঈসওয়ার আবার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মন্দির-মসজিদ-গির্জার ওপর কখনওই সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয়।
সরকার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলেও ভক্তদের ব্যাপারে তাদের নাক গলানোর কোনও দরকার নেই।
দ্বিতীয়ত, যে কোনও ধর্মীয় উপাসনালেয়ের ঐতিহ্য, ইতিহাস আর পরম্পরার সঙ্গে যারা যুক্ত ওই উপাসনালয়ের ওপর তাদের অধিকারই সবার আগে।
আর তা ছাড়া পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের কত ধনসম্পদ আছে সেটা এখানে বিচার্য নয়, এই রায়কে আমাদের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের দৃষ্টিতেই দেখা উচিত।
রাহুল ঈসওয়ার একে হিন্দুত্বের জয় না বলে ধর্মীয় বিশ্বাসের জয় বলেই বর্ণনা করতে চান।
তবে কেরালার কমিউনিস্ট সরকারের হাত থেকে মন্দিরের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় হিন্দুত্ববাদী বিজেপি যে খুশি, দলের নেতারা তা গোপন করছেন না।
অন্য দিকে কেরালার বামপন্থী সরকারের ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রী কে সুরেন্দ্রন জানিয়েছেন তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন না – শীর্ষ আদালতের নির্দেশকেই মনে নেবেন।