পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ও চাল সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। চালের সরকার নির্ধারিত মূল্য ও বাজার মূল্যে বৈষম্য থাকায় গুদামে চাল সরবরাহ করতে অনীহা দেখাচ্ছেন মিল মালিকরা। অপরদিকে ধান বিক্রির টাকা উত্তোলনে বিলম্ব ও ভোগান্তির কারণে কৃষকরা গুদাম বিমুখ হয়েছেন। এতে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চলতি বছর ভাঙ্গুড়া এলএসডি গুদামে ৮১০ মেট্রিক টন বোরো ধান ও ৭৯৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সরকার। ২৬ টাকা কেজি দরে কৃষকরা সরাসরি গুদামে ধান সরবরাহ করবেন এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করবেন। গত মাসের শুরু থেকেই এই ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু হয়। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই সংগ্রহ অভিযান। তবে সংগ্রহের দেড় মাস পার হয়ে গেলেও ১০ শতাংশ ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। খোলা বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এবং খাদ্যগুদামে বিক্রিত ধানের টাকা তুলতে ভোগান্তির কারণে কৃষকরা এ বছর ধান দিচ্ছেন না খাদ্যগুদামে। এ কারণে গত দেড় মাসে মাত্র ৬০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে।
খাদ্য গুদামের ধান বিক্রি করলে টাকা তুলতে বিভিন্ন অফিসে ঘুরতে হয়। এতে টাকা হাতে পেতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু কৃষকদের সবসময়ই তাৎক্ষণিক টাকার প্রয়োজন হয়। এর উপর হাট বাজারে ধানের দাম এবছর এমনিতেই ভালো। তাই কোনো কৃষক খাদ্যগুদামে ধান দিতে চাচ্ছে না।
এবছর ৩৬ টাকা কেজি দরে ৭৯৯ মেট্রিকটন বোরো চাল খাদ্যগুদামে সংগ্রহের জন্য ৩২টি মিলের সাথে চুক্তি করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস। কিন্তু গুদামে বিক্রির উপযোগী চাল প্রস্তুত করতে প্রতি কেজিতে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা। এতে প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা করে চাতাল ও মিল মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে। অথচ এই চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা কেজি দরে। এ অবস্থায় চাল খাদ্যগুদামে বিক্রি দিলে লস হবে। আবার চাল না দিলে জরিমানা হিসেবে চুক্তির টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছে চাল ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে এবছর চাল সংগ্রহ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। চালের ব্যাপারে সরকার নির্ধারিত মূল্য ও বাজার মূল্যের অসঙ্গতির কারণে গুদামে চাল সরবরাহ করতে চাতাল ও মিল মালিকরা অনীহা দেখাচ্ছেন। যদিও গুদামে চাল সরবরাহ করতে চাতাল ও মিল মালিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে এ পর্যন্ত ২৮০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে গুদাম কর্তৃপক্ষ।
সরকারি শর্ত অনুযায়ী গুদামে চাল দিলে প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা করে লস হবে। তবে কর্তৃপক্ষ শর্তের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হলে ক্ষতিটা কম হবে। যেমন শর্ত অনুযায়ী শুটার চাল দিলে তিন টাকা বেশি খরচ হবে। অথচ নন শুটার চাল নিলে তিন টাকা করে মিলারদের খরচ কমে যাবে। এক্ষেত্রে মিলাররা আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ধান সংগ্রহের জন্য এবছর লটারির মাধ্যমে উপজেলার প্রতিটি গ্রাম থেকে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু খোলা বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবছর ধান দিতে চাচ্ছেন না। এ কারণে কয়েকদিন পরে গুদামে ধান বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া চালের ব্যাপারেও মিল মালিকরা অনীহা দেখাচ্ছেন। তারা চাল ক্রয়ের ব্যাপারে শর্ত শিথিল করার অনুরোধ জানাচ্ছেন। কিন্তু সেটা করা সম্ভব নয়। তবে আর্থিক ক্ষতি হলেও চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে চাল দিতেই হবে। নইলে চাতাল ও মিল মালিকদের জরিমানা গুনতে হবে।