রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অসংখ্য বইয়ের রচয়িতা, গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদকে রাজধানীর মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
এর আগে আজ জুমার নামাজের পর এমাজউদ্দীন আহমদের বাসাসংলগ্ন রাজধানীর কাঁটাবন এলাকার মসজিদে মুনাওঅরে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিএনপি ও এর শরিক দল এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে এমাজউদ্দীনের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আজ শুক্রবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্ত্রীর কবরে এমাজউদ্দীন আহমদকে দাফন করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।
পরে বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এমাজউদ্দীন আহমদের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানাজায় শরিক হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মরহুমের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া জানাজায় নব্বইয়ের দশকের ছাত্রনেতারাও অংশ নেন।
এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৩২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অধিভুক্ত মালদাহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে অবিভক্ত মালদার গোলাপগঞ্জ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করেন। স্নাতকে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। দুটি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেছেন। এরই ফাঁকে ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন।
গতকাল রাত আড়াইটার দিকে বাসায় স্ট্রোক করলে অধ্যাপক এমাজউদ্দিনকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সেখানেই তিনি মারা যান। শুক্রবার জুমার নামাজের পর তার জানাজা হবে। তার স্ত্রী আগেই মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
প্রায় আড়াই দশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। পাশাপাশি পালন করেছেন প্রতিটি প্রশাসনিক দায়িত্বও। ছিলেন বিভাগীয় প্রধান, মুহসীন হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর, উপ-উপাচার্য ও সবশেষে উপাচার্য। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ছয় বছরের কর্মবিরতি শেষে ২০০২ সালে যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের উপাচার্য পদে।
ড. এমাজউদ্দীন আহমদ পিএইচডি করেছেন ১৯৭৭ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আশির দশকে তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কলেজ ইউনিভার্সিটিতে সিনিয়র ফেলো ছিলেন।
অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখির জন্যও এমাজউদ্দীন আহমদ খুব পরিচিত। ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে লিখেছেন ৫০টির বেশি বই। নিয়মিত কলাম লিখতেন তিনি। জাতিসংঘের ৪১তম অধিবেশনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক।