দুনিয়ায় আল্লাহর মনোনীত কিছু ঘর আছে, যেখানে বান্দা মহান আল্লাহর কুদরতি পায়ে সিজদাবনত হয়; আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। সেখানে প্রবেশ করলে মুমিনের মন আল্লাহর ভালোবাসার সৌরভে প্রশান্ত হয়ে যায়। সেখানে মুমিনরা মহান আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত হয়। সেটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হলো বাজার।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪১৪)
মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ ভীষণ পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)
মসজিদ হলো মুসলিম সমাজের মূলকেন্দ্র। এ কারণে রাসুল (সা.) হিজরতের প্রথম দিনই মসজিদ নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। মদিনায় হিজরতের সময় যাত্রাবিরতিকালে তিনি কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে মদিনায় পৌঁছে তিনি মসজিদ-ই-নববী স্থাপন করেন। এবং সেখান থেকেই ইসলামের জ্যোতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫০)
মসজিদ নির্মাণ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আল্লাহর প্রিয় হওয়ার মাধ্যম। কিন্তু শর্ত হলো, এতে কোনো রকমের অহমিকা, গৌরবের বিষ অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা যাবে না। মসজিদ নির্মাণ করতে হবে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। মসজিদ নিয়ে অহংকার করা কিয়ামতের আলামত। লোকেরা মসজিদ নিয়ে পরস্পর গৌরব ও অহংকারে মেতে না উঠা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৯)
তা ছাড়া মসজিদ নির্মাণ এমন একটি পুণ্যময় কাজ, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে। যত দিন সেই মসজিদে আল্লাহর ইবাদত হবে, তত দিন নির্মাণকারী এর সওয়াব পেতে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত ধরনের আমলের প্রতিদান মৃত্যুর পর কবরেও জারি থাকে। ১. যে ব্যক্তি কাউকে দ্বিনি ইলম শিক্ষা দেবে। ২. যে নদী প্রবাহিত করতে সহযোগিতা করবে। ৩. অথবা কূপ খনন করবে। ৪. অথবা গাছ রোপণ করবে। ৫. অথবা মসজিদ নির্মাণ করবে। ৬. অথবা কোরআন বিতরণ করবে। ৭. অথবা সুসন্তান রেখে যাবে যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করবে। (আল বাহরুজ জাখখার : ১৩/৪৮৪)
তাই আমাদের উচিত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মসজিদ নির্মাণ করা। কারো সেই সামর্থ্য না থাকলে কমপক্ষে সহযোগিতা করবে। মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে আত্মনিয়োগ করবে। মসজিদকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় করে রাখবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৫৫)
সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো, মুসল্লিদের মসজিদে এসে নামাজ পড়ার দাওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে নামাজ কায়েম করা। আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানুষদের আল্লাহর পথে নিয়ে আসা। মসজিদের সঙ্গে তাদের মন সম্পৃক্ত করে দেওয়া। কিয়ামতের দিন সেসব মানুষকে আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হবে, যাদের অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই সৌভাগ্যবান লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।