মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছোটভাই, তাঁর সহকারী একান্ত সচিব মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই। আজ রবিবার কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত উপজেলা মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে নিজ বাড়ির প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
এর আগে বিকেল আড়াইটার দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজ মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য লোকজনসহ বিপুলসংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বড়ভাই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। এ জানাজাটি ছিল খুবই সীমিত পরিসরের। পরিবারের সদস্যরা ছাড়া সেখানে আর কেউ ছিলেন না।
দুপুর দুইটার দিকে হেলিকপ্টার যোগে করোনায় মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের মরদেহ জন্মস্থান মিঠামইনের কামালপুর হেলিপ্যাডে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে একটি গাড়িতে করে মরদেহ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজ মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। আড়াইটার দিকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অর্নার দেওয়া হয়। এর পর বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা আড়াইটায় সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ছোট ভাইকে শেষ বিদায় জানাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও বিকাল ৪টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইনে অবতরণ করেন। তার উপস্থিতিতে কামালপুর গ্রামের নিজ বাড়ি প্রাঙ্গণে বাজ আসর বিকার সাড়ে ৫টায় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ছোটভাইয়ের কফিনে পুষ্পস্তবকও অর্পণ করেন। এর পরই মহদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পারিবারিক গোরস্থানে। বাবা হাজী তায়েব উদ্দিন ও মা তমিজা খাতুনের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি, রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, বিচারপতি মাহবুবুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজাল, পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আজিজুল হকসহ এলাকাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গত ২ জুলাই তার নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং কভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ৫ জুলাই তাঁকে রাজধানীল সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ১২ জুলাই থেকে তাঁকে ভেনটিলেশনে রাখা হয়। এরপর গত শুক্রবার মধ্যরাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ২ মেয়ে ও আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে চিকিৎসক ও একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম হাজী তায়েব উদ্দিনের ৫ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবদুল হাই ছিলেন পঞ্চম।