কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া ভার্চুয়াল দুনিয়ায় গড়ে উঠা অনলাইন পশুর হাটে যাতে কোনো প্রতারণার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকা এবং অনলাইনে ভূয়া ব্যবসায়ী ও প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
রবিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর হাটসহ দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা উঠে আসে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাশাপাশি, কোরবানির পশু পরিবহন, হাটে জাল নোট বন্ধে তৎপরতা, অতিরিক্ত হাসিল বন্ধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনিকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা খুবই জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন সম্পৃক্ত করে একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা যেতে পারে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘কোরবানি ঈদ স্থানীয় কৃষি ও প্রাণি সম্পদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে সরকার সীমিত আকারে কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে।
অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহ আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ শুরু থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। সীমিত পরিসরে স্থাপিত কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে, তবে এ বিষয়ে সাধারণ জনগণের জনসচেনতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’ ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যাপন ও অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি প্রায় ২.২ শতাংশ কমে যেতে পারে, এর ফলে আমাদের দেশে স্থানীয় বাজারে চাহিদা, বৈশ্বিক রফতানি এবং প্রবাসী আয় কমে গেলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অবনতির পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
তিনি আসন্ন পবিত্র ঈদুল আয্হায় কোরবানির পশুর হাটসমূহে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি বাড়ানো এবং অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য জনগণের মাঝে জনসচেতনতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।’
বাংলাদেশ ট্যার্নাস অ্যাসোসিয়েশন-এর চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, গতবছর কোরবানির পশু ও কাঁচা চামড়ার বাজার ছিল প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার। তিনি এবছরের পশুর হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম জোরদার এবং সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোরারোপ করেন এবং বিশেষ করে, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকলকে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতকরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দকে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
ই-ক্যাব-এর সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে যাদের ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ অনলাইনের কেনাবেচা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিল, তবে করোনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি আসন্ন কোরবানির ঈদে অনলাইনে পশু কেনাবেচার জন্য ‘ডিজিটাল হাট’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
অনলাইনে ভূয়া ব্যবসায়ী ও প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি-এর সভাপতি ও এফবিসিসিআই-এর প্রাক্তন সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আল আমিন, ডিসিসিআই সহসভাপতি মোহাম্মদ বাশিরউদ্দিনসহ আরও অনেকেই সংযুক্ত ছিলেন।