গত ১৭ জুলাই, ২০২০(শুক্রবার) সকালবেলা। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার মাস্টার পাড়া এলাকার আব্দুল গনি সাহেবের বাড়ি থেকে উৎকট গন্ধ পায় প্রতিবেশীরা। এমন দুর্গন্ধের কারণ অনুসন্ধানে গণি সাহেবের শাশুড়ী ও প্রতিবেশীরা হাজির উক্ত বাড়িতে। ঘর থেকে দুর্গন্ধ আসছে অথচ ডাকাডাকিতে কারও কোনো সাড়াশব্দ নেই। কৌতূহলী হয়ে আরও জোরে ডাকাডাকি। কিন্তু তাতেও সাড়া না পেয়ে এবার দরজা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত। কিন্তু হায়!গনি সাহেব (৪৫), তার স্ত্রী তাজিরন বেগম(৩৮), পুত্র তাজেল(১৭) ও ছোট কন্যা সাদিয়ার(০৮) রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে মেঝেতে।
এমন মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে টাঙ্গাইলসহ সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে রহস্য উদঘাটনে তৎপর র্যাব-১২। শুরু করা হয় সকল ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি। অবশেষে রবিবার (১৯ জুলাই, ২০২০) সকাল ০৮ টার দিকে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি মোঃ সাগর আলী(২৭),পিতাঃ মগবর আলী,গ্রামঃ ব্রাক্ষ্মনবাড়ি,ডাকঘরঃ আম বাড়িয়া,থানাঃ মধুপুর,জেলাঃ টাঙ্গাইল কে নিজ বসতবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের সত্যতার কথা স্বীকার করে এবং হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়।
অভিযুক্ত মোঃ সাগর আলীর স্বীকারোক্তি মতে, হত্যাকান্ডের শিকার আব্দুল গনি সুদের ব্যবসা করতো।আসামি সাগর আলীর সাথে পূর্বে থেকেই সুদের লেনদেন ছিলো তার। আসামি বেশ কয়েকবার সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। গত ১৪ জুলাই, মঙ্গলবার আব্দুল গনির কাছে পুনরায় ২০০/- (দুইশত টাকা) এর জন্য গেলে তাকে অনেক বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এতে সাগর অপমান বোধ করলে তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে হত্যা এবং টাকা পয়সা ও সম্পদ লুণ্ঠনের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর তার সহযোগীকে নিয়ে পরের দিন বুধবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত আনুমানিক ১০ ঘটিকায় ভুক্তভোগী গনির বাসায় যায়।
যাওয়ার পূর্বে সাগরের সহযোগী বাজার থেকে চেতনা নাশক নিয়ে যায়। আসামি ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত হওয়ায় খুব স্বাভাবিক ভাবে বাসায় ঢোকার অনুমতি পায়। আকস্মিক ভাবে চেতনা নাশক ব্যবহার করে গনিকে অচেতন করে। পরিবারের অন্যরা ঘুমিয়ে থাকায় তাদেরও অচেতন করতে সহজতর হয়। এরপর, ঠান্ডা মাথায় ভুক্তভোগীর বাসায় থাকা কুড়াল ও আসামিদের নিয়ে আসা ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রত্যেককে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। গৃহ ত্যাগ করার পূর্বে বাসার মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পলায়ন করে এবং বাসার বাহির থেকে তালা মেরে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে, আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আসামির বোনের বাড়ি, গ্রামঃ ব্রাক্ষ্মনবাড়ি (মজিদ চালা), থানাঃ মধুপুর,জেলাঃ টাঙ্গাইল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়।অপর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে র্যাব-১২ এর অভিযান চলমান রয়েছে।