ভারতের করিমগঞ্জ এলাকায় স্থানীয় লোকজনের হাতে গণপিটুনিতে নিহত তিন বাংলাদেশির মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের দুজনের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায়। এরা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে মো. নুনু মিয়া (২৮) ও একই গ্রামের আব্দুল মানিকের ছেলে জুয়েল আহমদ (২৭)।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে পিকনিকের কথা বলে পূর্বপরিচিত তিন যুবক নুনু মিয়া ও জুয়েল আহমদকে জুড়ী উপজেলায় তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় চার্জ না থাকায় জুয়েল তার মুঠোফোন বাড়িতে রেখে যায়।
গত শনিবার (১৮ জুলাই) মধ্যরাতে করিমগঞ্জের পাথরকান্দি অঞ্চলের বগরিজান চা বাগান এলাকায় স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে তাদের হত্যা করে।
গত রবিবার যারা নিয়ে যায় তাদের মধ্যে একজন বাড়িতে এসে জুয়েলের কথা বলে তার মুঠোফোন নিয়ে যায়। সোমবার (২০ জুলাই) সকালে আরো একজন এসে জুয়েলের কথা বলে তার কাপড় নিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসে জুয়েল ও নুনু মিয়া ভারতে স্থানীয়দের হাতে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। পরে ছবি দেখে পরিবারের লোকজন নুনু মিয়া ও জুয়েল আহমদকে চিনতে পারেন।
নিহত জুয়েল মিয়ার ভাই রুবেল মিয়া বলেন, ‘গত শনিবার পূর্বপরিচিত কয়েকজন তাদের বাড়ি থেকে জুড়ীতে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সোমবার সকালে জানতে পেরেছি যে, তারা ভারতে গিয়ে খুন হয়েছেন। তবে তারা কেন আর কী কারণে ভারতে গেছে সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছি না। নিহত নুনু মিয়াও আপন চাচা।’
সরেজমিনে সোমবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। দুই পরিবারে চলছে আজাহারি। এমনকি এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহত হওয়ার খবরে তাদের বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন পাড়া-প্রতিবেশীরা।
স্থানীয় তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস সোমবার (২০ জুলাই) রাতে ৮টায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিহত হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি তালিমপুর ইউপির কাঞ্চনপুর এলাকায়। তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে, তারা দুজন গত শনিবার জুড়ীতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সোমবার সকালে জুড়ী থানা পুলিশ আমাদের জানায় যে তারা ভারতে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। পরে নিহতদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি, তাদের বাড়ি আমার ইউনিয়ন এলাকায়।’
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে তিনজন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। এর মধ্যে বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়নের দুজনের কথা শুনেছি। আমরা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বাকি তদন্ত অব্যাহত আছে।’
স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহত বাংলাদেশিরা গত শনিবার রাতে সীমান্ত পেরিয়ে করিমগঞ্জের বগরিজান চা বাগান এলাকায় ঢুকে। এসময় স্থানীয় লোকজন গরু চোর সন্দেহে তাদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে শুরু হয় মারধর। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ নিহত ওই তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।