করোনাভাইরাসের কারণে ৫ মাস ধরে বন্ধ খাগড়াছড়ির সবকটি পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। একই অবস্থা রাঙামাটি ও বান্দরবানে। এতে করে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের।
পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হোটেল মোটেল ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এতে করে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে অনেকের। খাগড়াছড়িতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার ঈদেও কোন পর্যটক আসতে পারবে না। কেবল খাগড়াছড়িতে হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীদের দাবি করোনায় পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এখানে হোটেল মোটেলের সংখ্যা প্রায় ৫০ টি। এছাড়া রাঙামাটি সাজেকে রয়েছে শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ। সাজেকে যেতে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি আসে। তবে এখানকার স্থানীয় অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা থাকত। সাজেকগামী পর্যটকদের কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে ভালো ব্যবসা করত রেস্টুরেন্ট ও হোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। টানা ৫ মাস বন্ধে পুঁজি হারিয়ে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বলা যায় করোনায় বিপর্যস্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন। গত দুই দশকে গড়ে উঠা পাহাড়ের পর্যটন সবচে কঠিন সময় মোকাবেলা করছে। প্রতি বছর ঈদের পরবর্তী দুই সপ্তাহ পাহাড়ে প্রচুর পর্যটক সমাগত থাকলেও এবার তা নেই । আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝরণা, জেলা পরিষদ পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে সুনসান নিরবতা। পর্যটকশূন্য হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এই খাতের আর্থিক ক্ষতি। কাজ হারিয়ে অনেকে বেকার সময় কাটাচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারানোর দশায়। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগের পর আয় শূন্য হোটেল রির্সোট ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। ভবিষ্যত নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। এই অবস্থা চলমান থাকলে বিপাকে পড়বে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।
খাগড়াছড়ির আলুটিলার কয়েকজনপর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী জানান, করোনার পর থেকে এখানে কোন কোন পর্যটক নেই। দোকানে বেচাকেনা বন্ধ । সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে গেছে। গত মাস ৫ মাসে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রেস্টুরেন্টে স্টাফদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। আগে জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলায় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ পর্যটকরা আসলেও এখন কেউ নেই। পর্যটকরা না আসায় আমাদের লোকসান হচ্ছে।
অতিথি না থাকায় ক্ষতির মুখে হোটেল ব্যবসায়ীরা। হোটেলে আয় না থাকলেও স্টাফদের বেতন দিতে অনেকে হিমশিম খাচ্ছে। খাগড়াছড়ির গাইরিং হোটেলের ব্যবস্থাপক নয়ন ত্রিপুরা জানান, গত ৫ মাস ধরে আমাদের এখানে কোন পর্যটক আসতেছে না। একারণে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে। হোটেলে ১৫ জন স্টাফ আছে তাদের বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে। এভাবে চললে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব। খাগড়াছড়িতে প্রায় ৫০ টি ছোট বড় হোটেলে মোটেল রয়েছে তারা প্রত্যেকের একই অবস্থা।
এদিকে পর্যটক না আসায় বেকার হয়ে পড়েছে শত শত পরিবহন শ্রমিক। খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে পর্যটক নিয়ে চলাচল করে প্রায় ৩ শতাধিক জীপ( চাঁদের গাড়ি), মাহেন্দ্র পিক, সিএনজি। মার্চের পর থেকে খাগড়াছড়ি- সাজেক সড়কে পর্যটকবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পরেছে পরিবহন শ্রমিকরা। খাগড়াছড়িতে মাহেন্দ্র পিকআপ চালক প্রদীপ ত্রিপুরা জানান, ঈদ মৌসুমে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হত। প্রতিদিন অন্তত দেড় শতাধিক গাড়ি সাজেকে যাতায়াত করত। পর্যটক না আসায় বেকার সময় কাটাচ্ছি। অনেকে কিস্তিতে গাড়ি কিনেছে। কিন্তু পর্যটক না আসায় কোন আয় নেই। কিস্তি পরিশোধে অনেকে হিমশিম খাচ্ছে।
করোনার চেয়ে সবচেয়ে বড় প্রভাব পরেছে পর্যটন খাতে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আতংকের কারণে পর্যটন খাতে আস্থা ফেরাতে সময় লাগবে। সামনের দিনগুলিতে পর্যটন খাত আরো ক্ষতির মুখের পড়বে। খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল এর ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল ইসলাম, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত খাত পর্যটন। গত ৫ মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও পর্যটন খাতে মানুষের আস্থা ফেরাতে আরো এক বছর সময় লাগবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে আমরা আছি।
তবে এখনো পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, দেশে করোনা সংক্রমণের কারণে খাগড়াছড়ির সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পর্যটন কেন্দ্র খোলার বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।