দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে আলোচিত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করেছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তাঁকে ওএসডি করার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদ চলছে।
রেলওয়ের দুর্নীতি বন্ধ ও ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে বেশ কিছু উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না’ এবং ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’—এ নিয়ম প্রবর্তনে কাজ করছিলেন তিনি।
আগামী অক্টোবর নাগাদ এই নিয়ম চালু হতে পারে। এ ছাড়া আগস্টের মাঝামাঝিতে অনলাইন রিফান্ড বা অনলাইনে টিকিট কাটার পর যাত্রী যদি সেটি পরিবর্তন করেন বা যাত্রা বাতিল করতে চান, তাহলে তিনি টিকিট ফেরত দিয়ে অনলাইনেই অর্থ ফেরত নিতে পারবেন, এমন নিয়মও চালু করতে কাজ করছিলেন তিনি। একই সঙ্গে রেলওয়ের নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধেও নিজে ভূমিকা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
২৭ জুলাই সাংবাদিক মাহবুব কবির চপলের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে সাক্ষাৎকারে রেলওয়ে, ট্রেনের টিকিটসংক্রান্ত ও দেশের বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে তাঁর চিন্তাভাবনার রূপরেখা তুলে ধরেন অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কখনো যদি কাছে পেতাম, তাহলে বলতাম—স্যার, আমাকে ১০ জন অফিসার দেবেন। আমি বাছাই করব। ১০ জন কর্মকর্তা নিয়ে আমি একটা উইং করব। অফিস চালাব। সব ক্ষেত্রে, সব মন্ত্রণালয়ে, সব দপ্তর, সব অধিদপ্তরে, প্রত্যেকটা অ্যাড্রেস করব আমরা ১০ জন, সব বিষয়ে মানুষের চোখের পানি দূর করার জন্য। তিন মাস সময় নেব।
সবার মুখে যদি হাসি ফোটাতে না পারি, যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব। শুধু স্বাধীন করতে হবে আমার ১০টা অফিসারকে এবং আমরা অ্যাকাউন্টেবল থাকব শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, আর কারো কাছে না। এই দেশকে চেঞ্জ করে দেব ইনশাআল্লাহ। পারব। কথা দিতে পারি, বন্ডসই দিতে পারি, তিন মাসে দেশের চেহারা চেঞ্জ করে দিতে পারব।
প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টের অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরতে পারব, চেঞ্জ করে দিতে পারব, সিস্টেম ডেভেলপ করতে পারব এবং সিস্টেম ডেভেলপ করলে অন্যায়ও চলে যাবে, অনিয়ম চলে যাবে, দুর্নীতি থাকবে না।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে উইং করার পরিকল্পনা ব্যক্ত করায় তাঁকে ওএসডি করা হয়ে থাকতে পারে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন মাহবুব কবীর মিলন। তবে ওই বক্তব্যের জন্য তাঁকে কোনো নোটিশ বা সতর্ক করা হয়নি বলেও জানান।
আমি এমন কোনো কাজ করিনি, যে আমাকে ওএসডি করতে হবে। আমি দুর্নীতিমুক্ত করতে ১০ কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি টিম গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম। এই ইচ্ছাটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে করেছিলাম। তবে হয়তো তাঁকে ভুল বুঝিয়ে এমনটা করা হয়েছে। আমি এখনো বলব, ওএসডি হয়েছি, প্রচুর কাজের অবসর রয়েছে। আমাকে ১০ জন কর্মকর্তা দেন, দুর্নীতি রাখব না।
২৫ মার্চ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে বদলি করা হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। সেখানে দায়িত্ব পালনের সময় বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কম্পানির ভেজাল ও ক্ষতিকর পণ্য আটকে দেন।
একই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে জোরালো ভূমিকা রাখেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার এমবিএম আটকে রয়েছে। তিনি কৃষিপণ্যের জন্য আমদানিকারক ৪১টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিকর পণ্য শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন।